সড়কে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের ‘বাবা’ তিনি

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
 | প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২১, ২২:৫৭

জন্মের পর অনেকের হয়তো 'বাবা' বলে ডাকার সৌভাগ্য হয় না। কেউবা আবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয় খুঁজে পান বাবার ছায়াতলে। তবে এমন আশ্রয়টুকুর অভাব যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় পিতৃহারা সন্তানদের। মানবতার দূত হয়ে এসব সন্তানদের বাবা না হয়েও বাবার অভাব বুঝতে দেন না অনেকেই। এমনই একজন মানুষ ফখরুল আলম সমর। যিনি এতিম ও অনাথদের পাশে দাঁড়ান বাবার ভালবাসা নিয়ে।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি এমন মানবতা নিয়ে পাশে আছেন অনাথ এতিমদের। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে সন্তানের মর্যাদা দিয়ে নিজ দায়িত্ব এবং খরচে বসিয়েছেন বিয়ের পিঁড়িতে। লেখাপড়ারসহ বহন করেছেন বিয়ের সব খরচ। এমন বাবা পেয়ে অনাথ মেয়ে ভুলে গেছেন তার বাবার অভাব। আর এসব কাজে তৃপ্ততায় বুক ভরে যায় এই মহান মানুষটির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফখরুল আলম সমর সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের সাংবাদিক ওয়াসিল উদ্দিনের ছেলে। এই নামে একটি এতিমখানাও প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। তিনি ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। আর তখন থেকেই মানবসেবায় মনোনিবেশ তার। অবশেষে মানবসেবার ব্রত নিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন ইউনিয়নটির। এছাড়া করোনার সময়ে দুস্থদের বাবার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। নিত্যপণ্য সামগ্রী যার যা প্রয়োজন তাকে দিয়েছেন মুক্তহস্তে। অনেকেই বাবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে খুশিতে ঝরিয়েছেন চোখের পানি। তেমনি এবারের বাবা দিবসে বিয়ের পিঁড়িতে বসে খুশিতে আত্মহারা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মেয়ের পরিচয় পালন করা নাসিমা।

১১ বছর আগে সাভারের বলিয়ারপুর টেকেরবাড়ি থেকে নাসিমাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বর্তমান তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। নাসিমাকে লালনপালনের ভার দিয়েছিলেন চান্দুলিয়া এলাকার কোহিনুর বেগমের কাছে। এ পর্যন্ত মেয়ের মতই খোঁজ খবর রেখেছেন তিনি। অবশেষে নিজ অফিসে বিয়ে দিয়ে পিতার দায়িত্ব পালন করলেন তিনি।

প্রায় ১১ বছর আগে আট বছর বয়সী নাসিমা আক্তারকে কুড়িয়ে পান সমর। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে। ছোট্ট নাসিমা তার ঠিকানা বলতে পারতেন না। শুধু নিজের নাম ও বাবা মায়ের নাম জানতেন। সেখান থেকে তুলে নিয়ে তেঁতুলঝোড়া চান্দুলিয়া এলাকার কোহিনুর বেগম নামে এক নারীকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন। অবশেষে বিয়ের সব ধরনের আয়োজন করে আজ বিয়ে দিলেন উপযুক্ত পাত্রের সাথে। উপযুক্ত বয়স হওয়ার সাথে সাথেই সাভার পৌরসভায় চাকরিরত শাহজালাল (২৭) কে মেয়ের জামাই হিসাবে বেছে নেন এই চেয়ারম্যান।

শাহজালাল কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারীর ছোবহান আলীর ছেলে। তিনি পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লায় ভাড়া থেকে সাভার পৌরসভায় চাকরি করেন। এলাকাবাসী সকলের উপস্থিতে মেয়ের বিয়েতে আয়োজনের কমতি রাখেননি তিনি। বিয়ের গয়না শাড়িসহ যাবতীয় খরচ বাবার দায়িত্ব নিয়েই করেছেন তিনি।

বর শাহজালাল ঢাকাটাইমসকে জানান, আমি এমন একজনকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পেয়ে সত্যিই গর্বিত। যার কোন পরিচয় নাই তাকেই পরিচয়সহ পেলাম স্ত্রী হিসাবে। আমি আসলেই ধন্য। মানবতার ফেরিওয়ালার মত এমন বাবার সংস্পর্শ আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।

নাসিমা বলেন, আমার কোন পরিচয় ছিল না। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে তিনি আমাকে দিয়েছেন বাবার ভালবাসা। জীবনের যে সময় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন একজন বাবা। সেই সময়ে বাবা না থেকেও আমি যে ভালবাসা পেয়েছি, তা আপন বাবার চেয়েও কোন অংশেই নয়। আমি জানি আমার বাবা তিনিই, যিনি আমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে বড় করে তুলে আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে পর্যন্ত বসিয়েছেন।

এসময় উপস্থিত এলাকবাসী বলেন, আমরা এমন মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। এত বড় পরিবারের মানুষ হয়েও তিনি গরিবদের যেভাবে পিতৃস্নেহে জড়িয়ে ধরেন দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। তিনি আসলেই গরিবের বাবা।

এ ব্যাপারে ফখরুল আলম সমর বলেন, আমি এসব কাজ করে অনেক তৃপ্তি পাই। নাসিমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ১১ বছর দেখাশোনা করেছি। মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছি। আজ বিয়ে দিয়ে দিলাম। বাবা হিসাবে আমার দায়িত্ব কমে গেল। আল্লাহ যেন বাকি সময়টা এভাবেই মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দেন।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :