অবশেষে হুইল চেয়ারের স্বপ্ন পূরণ হলো তাদের

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২১, ২৩:১২

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় কাঁঠাল মুড়ি খাওয়ার আড্ডা জমেছে প্রতিবেশী সমবয়সীদের। খাওয়ার ফাঁকে তারা নানা ধরনের গল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পাশের ঘরে বসে তাদের আড্ডা উপভোগ করলেও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আড্ডায় যেতে পারছেন না ছিবার উদ্দিন। জ্ঞান বুদ্ধি স্বাভাবিক হলেও স্ট্রোকজনিত কারণে গত কয়েক বছর আগে এক হাত এক পা অবস হয়ে গেছে তার। এরপর থেকে অন্যের সাহায্য ছাড়া একা একা হাঁটা চলা করতে পারেন না তিনি।

ছিবার উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের কটামারা গ্রামে। স্ট্রোকজনিত কারণে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া ছিবার উদ্দিনের স্বপ্ন একটি হুইল চেয়ারের। কিন্ত আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তা কিনতে পারেননি তিনি। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও নাতি-নাতনি নিয়ে ছিবার উদ্দিনের সংসার চলে একমাত্র ছেলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে। যেকারণে বাড়ির পাশে সমবয়সীদের আড্ডা হলেও দিনের অধিকাংশ সময় ঘরে বসেই সময় কাটে তার।

এবার ছিবার উদ্দিনের সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার শিফা। তিনি ছিবার উদ্দিনকে একটি হুইল চেয়ার উপহার দিয়েছেন।

হুইল চেয়ার পেয়ে ছিবার উদ্দিন বলেন, এক সময় স্বাভাবিক জীবন ছিল তার। স্ট্রোকের পর থেকে এক হাত এক পা অবস হয়ে যায়। এরপর থেকে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। একটি হুইল চেয়ার হলে একটু হলেও চলাচল করতে পারতাম। কিন্ত সংসারে টানাপূরণের কারণে স্বপ্ন থাকা সত্বেও হুইল চেয়ার কিনতে পারেননি। এবার স্বপ্ন যেন স্বপ্নেই পূরণ হয়েছে তার।

ছিবার উদ্দিনের মতো একটি হুইল চেয়ারের স্বপ্ন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধি জাহেদা আক্তার, একই গ্রামের আমিনুর হোসেন, চাকলেশ্বর প্যাসপাড়ার অমিত সরকারসহ অনেকের। তাদের মতো অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শামীমা আক্তার শিফা। তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অস্বচ্ছল শারীরিক ও মানসিক প্রতিদ্বন্ধীদের খোঁজে বের করছেন। আর তাদের উপহার দিচ্ছেন একটি করে হুইল চেয়ার।

শামীমা আক্তার শিফা বলেন, প্রতি বছর উপজেলা পরিষদ থেকে রাস্তা-ঘাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাজে অনুদান দেয়া হয়ে থাকে। কিন্ত তার মনে হয়েছে সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষগুলোর চাহিদা পূরণেও সহযোগিতা করা জরুরি।

একটি হুইল চেয়ার একজন প্রতিবন্ধী মানুষের দুর্বিসহ জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিতে পারে। কিন্ত আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই সেই চেয়ার কিনতে পারেছেন না। সেকারণে তিনি উপজেলা পরিষদে তার অংশের টাকা দিয়ে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার কেনার পরিকল্পনা করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খোঁজে ১২ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধি নারী পুরুষ ও শিশুর তালিকা তৈরি করেছেন। গত ১৫ জুন উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাদের কয়েকজন প্রতিবন্ধীর মধ্যে হুইল চেয়ার বিতরণ করে কায্যক্রমের উদ্ভোধন করা হয়।

এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম, মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া, মির্জাপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোবারক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবন্ধী শিশু অমিত সরকারের মা রানী সরকার বলেন, একটি প্রতিবন্ধী শিশু একজন মায়ের হৃদয়ের কান্না। তাদের এমনিতেই অনেক কষ্ট। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে যখন তার প্রয়োজনীয় উপকরণটি দিতে না পারি একজন মা বাবার জন্য এর চেয়ে কষ্টের আর কি আছে। দু’পায়ে দাঁড়াতে না শিশুর জন্য একটি হুইল চেয়ার খুবই দরকার ছিল। সেটা পেয়ে আজ অনেক হালকা মনে হচ্ছে।

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার শিফা বলেন, ভবিষ্যতেও তিনি এ ধরনের কায্যক্রম অব্যহত রাখবেন।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রতিটি নারী পুরুষ ও শিশুর সহযোগিতায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত। যে কাজটি ইতিমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার শিফা শুরু করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এলএ)