সিনোফার্মের টিকা চায় চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২১, ১৪:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিকেলে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিনোফার্মের টিকা দেয়ার দাবিসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে। এসব দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে চীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার থেকে দেশে আবারও করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। চীন সরকারের উপহার পাঠানো সিনোফার্মের টিকা দিয়েই এই কর্মসূচি শুরু হয়। টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ১০ ক্যাটাগরির মানুষ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ছয় ক্যাটাগরির মানুষকে এ টিকা দিতে বিরত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সিনোফার্মের টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাদের নির্ধারণ করা হয়েছে সেই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা থাকলেও নেই চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তাই টিকা পাওয়ার জন্য মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, চীনে উৎপাদিত ভ্যাকসিন না নিলে তাদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সরকার একসময় দেশে এসে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের চীনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বললেও এখন আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়নি। ফলে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকার পর আবারও চীনে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশি ‘স্টুডেন্ট ইন চায়না,র সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী শীতকালীন অবকাশের সময় এবং পরবর্তীতে মহামারি ছড়িয়ে পড়লে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু দেড় বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত আমাদের ফিরে যাওয়া হয়নি এবং আমাদের ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। এক সময় অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার কারণে আমাদের চীনে যেতে হয়নি। অনলাইনে পাঠদান পর্যাপ্ত না হওয়ায় আমরা পড়ালেখায় অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় যদি পরবর্তী সেমিস্টারে চীনে যেতে না পারি, আমাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়বে। অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার সংকটে পড়বে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ইতোমধ্যে চীন সরকার দেশটিতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে সে দেশের উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।‌ কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন বাদ দেওয়া হয়েছে জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। চীনের উপহার দেওয়া ১১ লাখ টিকা থেকে চীনে ফেরতেচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

চীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কখনোই এমনটা আশা করিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এবং আমাদের মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেওয়া ও ভ্যাকসিন না দেওয়া আমাদের আশাহত ও বিস্মিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে চীনা ভ্যাকসিনসহ সাতটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজারসহ দেশে অন্যান্য ভ্যাকসিন থাকলেও আমরা তো অন্য কোনো ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার চাইনি। শুধুমাত্র চাইনিজ ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার চেয়েছি। পাকিস্তান, নেপালসহ অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চায়নিজ অ্যাম্বাসি তাদের দেশের নাগরিক, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ যারা চীনে ফিরতে ইচ্ছুক তাদেরকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে এসেছে। আর সেখানে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরাসরি ঘোষণার পরও আমরা ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, যা আমাদের অত্যন্ত মানসিকভাবে হতাশ ও বিপর্যস্ত করেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট। ইন্টার্নশিপের সুযোগ না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) জানিয়েছে, অনলাইনে ইন্টার্নশিপ গ্রহণ করবে না, যা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমস্যা আরও প্রকট করেছে। ভ্যাকসিন মজুদ শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ও দ্রুত ভ্যাকসিন দেয়ার দাবি জানান তারা।

‌মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকারে রেখে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা।‌ দীর্ঘ সাত মাস ধরে বন্ধ থাকা চীনে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পুনরায় চালু করা এবং চীনা অ্যাম্বাসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সেমিস্টারের মধ্যেই চীনে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/আরকে/এমআর)