হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যা একটিরও কম

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২১, ২০:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা বিবেচনায় এক হাজার মানুষের জন্য সাধারণ বেড আছে একটিরও কম। যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংখ্যার সুপারিশকৃত শয্যাসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। স্বাস্থ্যসেবা খাতের এমন চিত্র উঠে এসেছে খোদ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে।

সোমবার রাজধানীর বিবিএস মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘সার্ভেস অ্যান্ড স্টাডিজ রিলেটিং টু জিডিপি রিবেইজিং ২০১৫-১৬’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৯ এর ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিদ্যমান শয্যাসংখ্যা বিবেচনায় প্রতি হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা ০ দশমিক ৩২টি। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিদ্যমান শয্যাসংখ্যা বিবেচনায় প্রতি হাজারে মানুষের জন্য শয্যাসংখ্যা প্রায় ০ দশমিক ৬৪টি।

আর সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল একসঙ্গে বিবেচনা করলে প্রতি হাজার জন মানুষের জন্য শয্যাসংখ্যা মাত্র ০ দশমিক ৯৬টি। অর্থাৎ একটিরও কম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুপারিশকৃত প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে ৩ দশমিক ৫টি হাসপাতাল শয্যার চেয়ে অনেক কম।

জানা গেছে, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ প্রথম হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। সবশেষ ২০০৭ সালে এমন জরিপ করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক আব্দুল খালেক বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মু. ইয়ামিন চৌধুরী, বিবিএস ডিজি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

এসময় বলা হয়- জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের আউটপুটের পরিমাণ মধ্যবর্তী ভাগে, মূল্য সংযাজন, কর্মসংস্থানের পরিমাণ, কর্মসংস্থান ব্যয় সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

জরিপে বলা হয়েছে, ৩০ জুন ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতালে দেশে মোট শয্যাসংখ্যা এক লাখ পাঁচ হাজার ১৮৩টি। এরমধ্যে সাধারণ শয্যাসংখ্যা ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। নন এসি কেবিন (একক শয্যা) ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, নন এসি কেবিন (দুই শয্যা) ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এসি কেবিন (একক শয্যা) ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ আর এসি কেবিন (দুই শয্যা) ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

জরিপে দেখা গেছে, প্রতি একজন চিকিৎসকের (ডেন্টাল সার্জন বাদ দিয়ে) বিপরীতে মাত্র ০ দশমিক ৮৫ জন নার্স রয়েছেন। ডেন্টাল সার্জনদের অন্তর্ভুক্ত করলে, প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে নার্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ০ দশমিক ৮৩ জন।

শয্যা ও নার্সের অনুপাতে প্রতি ৩ দশমিক ৪৭টি শয্যার জন্য একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

জরিপে আরও দেখা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি খাতে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা জুন ২০১৮ পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ১০ হাজার ২৯১টি (৬০.৬১ %), হাসপাতাল চার হাজার ৪৫২টি (২৬.২২ %) এবং মেডিকেল ক্লিনিক এক হাজার ৩৯৭টি (৮.২৩ %)। অন্যদিকে ডেন্টাল ক্লিনিকের সংখ্যা ৮৩৯টি (৪.৯৯ %)। 

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থানের আকার

৩০ জুন ২০১৮ তারিখে ১৬ হাজার ৯৭৯টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মোট তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮০ জন কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এর মধ্যে তিন লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন (৮৫.৭২%) পূর্ণকালীন এবং ৫২ হাজার ৬৩৯ জন (১৪.২৮%) খণ্ডকালীন। মোট নিয়োজিত জনবলের মধ্যে, হাসপাতালে ৫৬.৩২%, রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে ৩৬.৭৯% এবং ক্লিনিকে ৫.৭% জনবল নিয়োজিত ছিল। ডেন্টাল ক্লিনিকে নিয়োজিত জনবল ১.১৯%।

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি

২০১৭-১৮ অর্থবছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অনুমিত হার ৯.২৭%; হাসপাতালসমূহের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ১২.১৬%। মেডিক্যাল ক্লিনিকসমূহের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৫.৮৯%; রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৫.৩১%  এবং দন্ত ক্লিনিকসমূহে প্রবৃদ্ধি ০.৮২%। 

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির তথ্য তুলে ধরে জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুনে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট দুই লাখ ৮৯ হাজার ১২৬ জন কাজ করতেন, বিপরীতে ২০১৮ সালের জুনে সেখানে তিন লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন কাজ করতেন।

পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এককভাবে ৭৭.৩৩ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তারপর যথাক্রমে রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে ১৯.৮৫ শতাংশ এবং ক্লিনিকগুলোয় ৩.৭০ শতাংশ কর্মসংস্থার তৈরি হয়েছে। নতুন পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের মধ্যে ডেন্টাল ক্লিনিকের আওতায় কর্মসংস্থানের প্রাক্কলিত হিসাব ছিল ০.১২ শতাংশ। মোট পূর্ণকালীন নতুন কর্মসংস্থানের মধ্যে চিকিৎসকের চার হাজার ৫৯০টি, সেবিকার চার হাজার ৭২১টি এবং ডেন্টাল সার্জনের ৪৯টি পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলেও জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/বিইউ/জেবি)