বাহিনীর সদস্যদের মর্যাদাবৃদ্ধিতে অভাবনীয় সব উদ্যোগ আইজিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুন ২০২১, ১৫:৪৭ | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২১, ২১:৩২

ফুল-বেলুন, রঙিন ফিতায় সজ্জিত গাড়িতে চড়ে অবসরে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্য। সঙ্গে থাকছে সহকর্মীদের শ্রদ্ধা, অশ্রুসিক্ত শুভেচ্ছাও। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে একজন সদস্যের এমন বিদায় আগে কল্পনাও করেনি কেউ। অনেকটা সাদামাটা ছিল অবসরযাত্রা। কিন্তু বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর অভাবনীয় এক উদ্যোগ নেন সদস্যদের বিদায়যাত্রার। চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফেরাটা যেন হয় সম্মানের, মর্যাদার, ভালো লাগার- সেই ভাবনা থেকে বিদায়ী সংবর্ধনার রীতি চালু হয়েছে। এখন যারাই অবসরে যাচ্ছেন পাচ্ছেন এই সম্মান।

নাড়ির টানে বাড়িমুখো পুলিশ সদস্যদের জন্য দূরপাল্লার পরিবহন কেউ কি কল্পনা করেছিল আগে? সেই কল্পনা এখন বাস্তব। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার যান। শুধু পুলিশ সদস্যদের নিয়ে। এতে যাত্রার সময় যেমন কম লাগছে, ভাড়াও সাশ্রয়ী। পুলিশ সদস্যদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য বর্তমান পুলিশপ্রধানের অনন্য সব উদ্যোগের মধ্যে এটিও একটি।

পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢেলে সাজানো হয়েছে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বদলে গেছে হাসপাতালটির চিত্র। বেড়েছে সেবার মান ও পরিধি। শুধু পুলিশ সদস্যই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যরাও এখানে পাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। এটিও সম্ভব হয়েছে বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের প্রচেষ্টায়।

পুলিশপ্রধানের পদক্ষেপের কারণে ‘জনমুখী পুলিশি সেবা’ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। থানা থেকে বের হয়ে পুলিশকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষের পাশে থেকে সেবা দেয়া, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ বাহিনী।

আইজিপির কর্মতৎপরতা নিয়ে পুলিশের সাবেক সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মালিক খসরু পিপিএম যেমন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এগিয়ে নিতে বর্তমান আইজিপির দ্বিধাহীন সমর্থন বাহিনীর সবাইকে উজ্জীবিত করে। বিভিন্ন সময় তার সাহসী পদক্ষেপ বাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রাণিত তো করছেই, তাতে পুলিশের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।

৩৭তম আইজিপি হিসেবে গত বছরের ১৫ এপ্রিল দায়িত্ব নেন ড. বেনজীর আহমেদ। সফলতার সঙ্গে ইতিমধ্যে এক বছর পূর্ণ করেছেন। আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ঘোষণা করেন পাঁচ মূলনীতি- জনগণের প্রতি অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন, বিট পুলিশিং বাস্তবায়ন, পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ ও শৃঙ্খলা নি‌শ্চিতকরণ।

এছাড়া কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজি পর্যন্ত সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য বছরে অন্তত একবারের জন্য হলেও বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুলিশ প্রধান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বলেছেন, ‘পুলিশের পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সম্মান ও গর্ব নিয়ে চাকরি করতে হবে; যাতে চাকরি শেষে মর্যাদা নিয়ে বাড়ি যাওয়া যায়। আর দায়িত্বপালনকালে শারীরিক শক্তি নয়, আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে কোনো প্রকার নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। সব উপায়ে সর্বতোভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।’

১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। র‌্যাবের ডিজি হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

এদিকে আইজিপি হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদের বর্ষপূর্তিতে পুলিশ সদস্যের কল্যাণে চালু হয় ‘পুলিশ বাস সার্ভিস’। সরকারি ছুটি বা দরকারি প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যরা কমমূল্যে বাসে ‘যাতায়াত সেবা’ পাচ্ছেন। পুলিশ পরিবারের সন্তানরাও এই সুবিধার আওতায় রয়েছেন। তাছাড়া যাত্রাবিরতিতে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কমমূল্যে খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখন বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস সেবা চলছে, দ্রুতই সকল রুটে চলাচল শুরু হবে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।

সম্প্রতিক পুলিশের যেসব সদস্য চাকরিজীবন শেষ করছেন তাদের সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানোর রেওয়াজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উপহারের পাশাপাশি পুলিশের গাড়িতেই তাদেরকে কর্মস্থল থেকে শেষবারের মতো বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। পুলিশ বলছে, বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আইজিপি মহোদয়ের যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা সেখান থেকেই এই ধরণের কাজ সম্ভব হচ্ছে।

করোনার বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান ড. বেনজীর আহমেদ। ভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে চালু করেন ‘প্যান্ডেমিক পুলিশিং’। প্রণয়ন করেন আন্তর্জাতিক মানের এসওপি এবং ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল। করোনায় সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে একক বাহিনী হিসেবে পুলিশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। মৃত্যুও বাড়তে থাকে হুহু করে। এই অবস্থায় ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে বাড়ানো হয় বেড সংখ্যা। ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল থেকে ৭৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়। এছাড়া বেসরকারি একটি হাসপাতাল ভাড়া নিয়ে পুলিশের সেবা দেওয়া হয়। তাছাড়া ক্যান্সার ইউনিট, ক্যাথল্যাব স্থাপনসহ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছেন আইজিপি।

আইজিপির প্রশংসায় জাতিসংঘ

অস্ত্রের মুখে ডাকাতি হওয়া জাতিসংঘের এক সদস্যের মালামাল দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারের ঘটনায় জাতিসংঘের প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ পুলিশ। সংস্থাটির সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ইউএনডিএসএস) নিরাপত্তা উপদেষ্টা রমেশ চন্দ্র সিংহ পুলিশের প্রশংসা করে বলেছেন, এটা সম্ভব হয়েছে পুলিশের আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে। সত্যিই এই কাজটা অনেক প্রশংসার দাবি রাখে। অভিনন্দনপত্রে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ও শেরেবাংলা নগর থানারকে অভিনন্দন জানান রমেশ চন্দ্র।

বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করে অভিনন্দনপত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ভারতের পুলিশ বাহিনীতে ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ছিনতাই হওয়া জিনিস উদ্ধার করে তা প্রকৃত মালিককে ফেরত দেয়া কতটা কষ্টকর, চ্যালেঞ্জিং ও গর্বের- সেটি বাংলাদেশ পুলিশ করে দেখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।

সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন

গত এক যুগে ড. বেনজীর আহমেদ এমন তিনটি দায়িত্বপূর্ণ পদে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন ও দিচ্ছেন, যা যে কারও জন্য ঈর্ষণীয়। তিনি প্রতিটি দায়িত্ব পেয়েছেন দেশের এক একটি ভিন্ন ধারার সংকটকালে। নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও আধুনিক কৌশল কাজে লাগিয়ে পুলিশকে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্বুদ্ধ করছেন আইজিপি। পাশাপাশি নিজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক ও মানবিক কাজ করে চলেছেন পুলিশ-প্রধান। তার ওপর সরকারপ্রধানের বারবার আস্থা রাখা নিছক আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। সাহসিকতা, দক্ষতা আর সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থার জায়গাটি তৈরি করেছে।

পুলিশের সাবেক সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মালিক খসরু পিপিএম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রতি বর্তমান আইজিপির অকুণ্ঠ ভালোবাসা রয়েছে। তিনি মেধাবী ও চৌকস অফিসার। জঙ্গিবাদ, হেফাজতের নাশকতা ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস রুখতে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সময় তার সাহসী পদক্ষেপ বাহিনীর সদস্যদের সব সময় অনুপ্রণিত তো করছেই, পাশাপাশি পুলিশের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।’

বেনজীর আহমেদ প্রতিটি দায়িত্ব পালনকালে নতুন ভাবনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে বাহিনীর উন্নয়ন, সদস্যদের পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের সঙ্গে সেতুবন্ধ রচনা করে দেশসেবায় ব্রতী হয়েছেন উল্লেখ করে সাবেক সহকারী মহাপরিদর্শক বলেন, ‘তিনি (বেনজীর) দুই লাখ পুলিশের সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের যোগাযোগকে জনবান্ধব করতে কাজ করছেন।’

মেধাবী, সৎ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত বেনজীর আহমেদ চাকরিজীবনে সর্বোচ্চ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। ২০২০ সালে ষষ্ঠবারের মতো বিপিএম (সাহসিকতা) অর্জনের রেকর্ড গড়েন তিনি। এর আগে ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে এই পদক তার সাফল্যের মুকুটে যোগ হয়।

(ঢাকটাইমস/২১জুন/এসএস/এইচএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :