প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২১, ০৯:৩৪

দেশের স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

মহিউদ্দিনের মেয়ে ও ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, তার বাবা প্রায় ২০ বছর ধরে মস্তিষ্কের রোগ পারকিনসন’স এ ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠেন। মঙ্গলবার বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৪৪ সালে ফেনীর পরশুরামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান পোস্টাল সার্ভিসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নটর ডেম কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ‘ব্লু অ্যান্ড গোল্ড’ নামক কলেজ ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মহিউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়া শেষ করে পাকিস্তান কাউন্সিল স্কলারশিপ নিয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সে সময় তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি ক্রনিকলের সম্পাদক ছিলেন।

এমএ পড়া শেষে তিনি পাকিস্তান টাইমসে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের প্রথম দুই মাসের মধ্যেই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ‘মাস কমিউনিকেশন ও পাবলিক রিলেশন্স’ বিষয়ের সহকারি প্রভাষক হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব পান।

১৯৬৯ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি-র জন্য আবেদন করেন এবং উঁচু নের আর্থিক সহায়তা তথা বৃত্তি সহকারে তা গৃহীত হয়। একই সময়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ওইউপি)-এর পাকিস্তান শাখায় সম্পাদক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সেখানেও আবেদন করেন।

পরে ওইউপি পাকিস্তান শাখার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে দুই বছর ওইউপি ঢাকা শাখার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭৫ সালে ওইউপি-এর ঢাকার কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে মহিউদ্দিন আহমেদকে করাচি শাখায় ‘এডিটর-অ্যাট-লার্জ’ বা রোভিং এডিটর হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু করাচিতে একজন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাস করার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। আর এই সিদ্ধান্তই তাকে ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’ নামে নিজের প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রেরণা ও সুযোগ এনে দেয়। ইউপিএল প্রধানত পাঠ্যবই ও রেফারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় বই প্রকাশ করে থাকে।

মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৮১ সাল থেকে মোট ১৬ বার ইউপিএল ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার’ পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯১ সালে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। পরিবেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৭ জন প্রকাশককে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। মহিউদ্দিন ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

অ্যারিজোনার বেনসনে অবস্থিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’র আন্তর্জাতিক কার্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে তাকে ‘পাবলিশিং ম্যানেজমেন্ট’ (প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে ‘কালচারাল ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালে ‘বাংলাদেশ অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘ইমেরিটাস পাবলিশার’ পদবি লাভ করেন তিনি।

২০১২ সালে মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশ করেন। ১৯৬৬-৬৯ সময়কালে কারাগারে বন্দীদশায় বঙ্গবন্ধু দিনলিপি আকারে এই আত্মজীবনী লিখেছিলেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি একইসঙ্গে ভারত (পেঙ্গুইন) ও পাকিস্তানে (ওইউপি) ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় প্রকাশ করার ব্যবস্থাও তিনি করেন।

ঢাকাটাইমস/২২জুন/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :