নেয়ামত ভূঁইয়া’র অণুকাব্য (৭ম কিস্তি)
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২১, ১০:১০ | আপডেট: ২২ জুন ২০২১, ১০:১৮
১.পথক্লান্ত পান্থ
সবহারা হয়ে ক্লান্ত দেহে
বিরান মাঠের পথের ধারে বসে থাকি,
তখনো কে এসে বলে হে পান্থ, এখনো তো ঢের পথ বাকি।
মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় পথ চলবার সব পালা,
সেই পথিকের কী লাভ তখন পথ হয় যদি পিচঢালা।
২. স্বাধীনতার স্বরূপ
স্বাধীনতার স্বরূপ কেমন,কোন দেশে ওর ঘরবাড়ি,
সে সব কথা জানা যদি হয় এত্তোটাই দরকারি।
স্বাধীনতার মানেটা যে কী আগেতো চাই তাই বোঝা,
নইলে দশা হবে যেমন খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা।
স্বপ্ন হয়ে স্বাধীনতা থাকে মনের নিভৃতে নিরালায়,
রক্ত গঙ্গায় সিনান করে সেই স্বাধীনতা শেষে স্বরূপ পায়।
৩. ফুলের প্রতি মিনতি
ফুলকে বলি, জগতটাকে
তোমার মতো ফুটিয়ে তোলো,
মুক্তিমন্ত্রে একে একে
সব জড়তার বাঁধন খোলো।
৪. সুখের পসরা
সুখ নেবে গো সুখ! নিত্য নতুন সুখ!
হরহামেশা হরেকরকম হরিলুটের সুখ!
নতুন যারা এ তল্লাটে
পা রেখেছো সুখের হাটে,
খেলায় তোমরা বড্ড কাঁচা পুঁচকে আগন্তুক,
সুখ পেতেও কপাল লাগে; বুঝলে ভদ্দলোক!
৫. নাবিক
নাবিক হলেই বুঝবে তুমি সাগর কতো উতল,
উথাল পাথাল ঢেউ ভাঙে কোন অতল জলের ঢল!
তুমি কতো দক্ষ নাবিক, কোথায় তোমার ভুল,
কোথায় তোমার ডুববে জাহাজ, কোথায় পাবে কূল।
তেমন দক্ষ হও জীবনের সাগর পাড়ি দিতে,
নইলে তোমার ডুববে জাহাজ সলিল সমাধিতে।
৬. শৃঙ্খল
শৃঙ্খল দিয়ে প্রাণি বাঁধা যায়
প্রাণ বাঁধা যায় না,
মালা বদলের পালা শেষ হলেই
মন বাঁধা যায় না।
৭. পরের দোষ
পরের হাজার দোষ ঘেঁটে ঘেঁটে নিজের দোষকে ঢাকি,
এই তরিকায় নিজেরা নিত্য নিজেদেরই দেই ফাঁকি।
কখনো ভাবি না সব কৌশলই একদিন হবে হারা,
দুর্যোধন ও শকুনি মামারা একে একে যাবে মারা।
কালের চক্রে সকল ফেরেবি কার্যকারিতা হারাবে,
নিজের দোষের গন্ধ সেদিন আকাশে বাতাসে ছড়াবে।
৮. কসরত
একে ধরো, ওকে ধরো;
এতো ধরা-ধরি করে
ধরণীতে টিকে থাকা দায়,
এই উঠে, এই পড়ে;
এতো ওঠা-পড়া শেষে
পরপারে পাড়ি যে জমায়।
৯. সোনালি ধানের শীষ
সোনালি ধানের শীষের বলে প্রতি কণা,
‘সোনার ফসল ফলায় শ্রম ও সাধনা’।
বাতাসে দুলিয়ে মাথা ধানের শীষেরা,
বলে এই দেশ সব দেশের চে’ সেরা।
নবান্নের উৎসব আমাকে জানায়;
‘তোমার স্বপ্ন আঁকা শষ্য-দানায়’।
১০. কুজনের পাতা ফাঁদ
কুজনের পাতা ফাঁদ— আশা চোরাবালি;
দুধারি করাতে কাটে বরাতের ফালি।
মুখে যদি ফোটে খৈ
যদি করো হৈ চৈ,
উল্টো তোমারই মুখে দেবে চুনকালি,
তোমাকে যা দেয় ওরা— সবি জোড়াতালি।
১১. ছদ্মবেশের বেসাতি
ঈশ্বরে যার বিশ্বাস নেই; সেও টেপে জপমালা,
কারণ সে মালার প্রদর্শনেই ভরে মানতের থালা।
নামাবলী গায়ে বগলের নীচে রেখে বিষমাখা ছোরা,
আধ্যাত্মিকতার আঁখড়ায় করে নজরানা বাটোয়ারা।
১২. ক্ষুধার জ্বালা
ক্ষুধার জ্বালায় যে জঠরে জ্বলে
হাবিয়া দোজখের আগুন,
তার তাতে আর কীবা আসে যায়
আসে যদি বসন্ত-ফাগুন?
১৩. আরাধনা
তোমাকে আমি ভুলে থাকি খোদা
নানা অজুহাত বাহানা ওজরে,
আমার আড়ালে থাকলেও তুমি,
আমাকে রেখেছে তোমার নজরে।
তোমার কৃপার ছায়ায় আমার
যাপিত জীবন চলমান,
তোমার ইচ্ছাতে হোক নিরূপিত
আমার পতন ও উত্থান।