পার্থ গোপালের জামিন: আইনের ব্যত্যয় নাকি অন্য কোনো ঘাপলা?

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২১, ১২:১০ | আপডেট: ২২ জুন ২০২১, ১২:১৮

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের জামিন দেয়ার ঘটনায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে আদালত অঙ্গনে। ঘটনাটি কারও মতে রহস্যজনক, কেউ বলছেন প্রথার অমান্য।

এ জামিন আদেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কারণ এর আগে কয়েকবার হাইকোর্টে জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন পার্থ। হাইকোর্টে একাধিকবার জামিন না পেয়ে বিচারিক আদালতে জামিন পেলেন কিভাবে? এটি কি আইনের ব্যতয় নাকি অন্য কোনো ঘাপলা? এ নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার মনে হচ্ছে পার্থ গোপালের জামিন নিয়ে রহস্য আছে। প্রথা অনুযায়ী হাইকোর্ট কারও জামিন না মঞ্জুর করলে বিচারিক আদালত সেই ব্যক্তির জামিন দেন না। হাইকোর্টে তিন বার জামিন নামঞ্জুরের পর বিচারিক আদালত তাকে কেন জামিন দিল জানি না। এজন্য পার্থের বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকর ঢাকাটাইমসকে বলেন, জামিন দেয়ার যথাযথ উপাদান থাকলে আসামিকে জামিন দিতে পারেন আদালত। সেটি উচ্চ আদালত হোক আর বিচারিক আদালত। তবে, আমার প্র্যাকটিস জীবনে দেখেছি কোনো মামলায় হাইকোর্ট আসামিকে জামিন না দিলে সেটি জজকোর্ট সাধারণত দেয় না।

৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার বরখাস্তকৃত ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টকে পাশ কাটিয়ে পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেয়ায় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাইকোর্টে একজন ব্যক্তির জামিন আবেদন তিন বার রিজেক্ট করা হলো। উনি একাধিকবার হাইকোর্টে জামিন চাইতে গেলেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে ৬ মাসের মধ্যে মামলা শেষ করার নির্দেশ দিলেন। তারপরেও জজ সাহেব জামিন দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয় না। কিন্তু কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট যদি কোনো আসামিকে জামিন না দেয়, তাহলে প্রথা ভেঙে নিম্ন আদালত কখনও জামিন দেয় না। যদি না বিশেষ আগ্রহ থাকে।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিষয়টি নিয়ে আদেশের কপি হাতে পাইনি। এজন্য কিছু বলতে পারছি না। দুর্নীতি দমন কমিশন আমাকে এ বিষয়ে এখনো দায়িত্ব দেয়নি।   

দুদকের আরেক আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে তিনি ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিরোধীতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। আদালত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি নিয়ে পার্থ গোপাল বণিকের জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চ পার্থকে জামিন দেয়নি। ২০২০ সালের ৩ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি শেষে পার্থের জামিন নামঞ্জুর হয়।

২০১৯ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপাল বণিকের নিজ ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এরপরের দিন ২৯ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ পার্থ গোপাল বণিককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২৪ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন চার্জশিট দাখিল করেন।

এ মামলার চার্জশীটে পার্থ গোপাল বণিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন বলে উল্লেখ করা হয়। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।

পার্থ গোপাল বণিক ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আর ২০০২ সালে তিনি জেল সুপার পদে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর তিনি কারা উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/এআইএম/কেআর)