শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২১, ১৩:৫৪

আতিক খান

গত ১৫-১৬ মাস স্কুল, কলেজ আর ইউনিভার্সিটি কার্যত বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।এমনকি কলেজ ভার্সিটিতে কিশোর তরুণদের ভর্তি কিংবা সেমিস্টার পরীক্ষাগুলোও আমরা সেইভাবে নিতে পারিনি৷ অথচ সরকারি হিসাবে আমাদের যে সংক্রমণের হার, সেটা ভয়াবহ কিছু না৷ অন্তত ক্লাস নাইন হতে ভার্সিটি পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া যেত। ক্লাসে ভিড় কমাতে প্রয়োজনে দুইটা গ্রুপ করে একদিনে সময় ভাগ করে ক্লাস নেয়া যেত অথবা অল্টারনেট ডে'তে রুটিন করেও ক্লাস নেয়া যেত৷ রবি-মঙ্গল-বৃহষ্পতি আর শনি-সোম-বুধ।

উন্নত আর মাঝারি মানের কিছু স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটিতে অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসগুলোতে উপস্থিতির হার বেশ কম, পঞ্চাশ শতাংশও নিয়মিত ক্লাস করে না। আর যারা ক্লাসে লগ ইন করে, তাদের অনেকেই লগ ইন করেই ঘুম দেয় নইলে অন্য একটা গ্যাজেট ব্যবহার করে সোশাল মিডিয়ায় সময় কাটায়।

গণপরিবহন চলে, বাজার চলে, মার্কেটও চলে কিন্তু স্কুল-কলেজ আর ভার্সিটি চলে না। মোবাইল আর ইন্টারনেট আসক্ত এক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, সাথে আছে পর্নোগ্রাফি আর অনলাইন গেইমস। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয় বছর লাগবে, আমার জানা নেই৷ অল্প পড়ে বা প্রায় না পড়েই পরের ক্লাসে প্রমোশন পাচ্ছে, এদের পড়ালেখার ভিত্তিগুলো তাই হয়ে যাচ্ছে বেশ দুর্বল।

করোনার জন্য কিশোর-কিশোরীরাও অনেকটা ঘরবন্দী। আর এদের সময় কাটানোর মূল মাধ্যমই হলো ডিজিটাল মিডিয়া, অর্থাৎ মোবাইল নইলে ল্যাপটপ। 

দুনিয়ার অপকর্মের সোর্স হলো এই মোবাইল। টিন এজ প্রজন্ম যতটুকু নষ্ট হয়েছে, তার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকাই হলো মোবাইল আর ইন্টারনেটের। এখন তো ঘরে ঘরে ৩-৪ বছরের শিশুরাও আইপ্যাড নইলে মোবাইল হাতে ঘুরাঘুরি করে। অথচ শৈশব হতেই সন্তানকে সময় দিতে হবে, গড়ে তুলতে হবে। কৈশোরে সেই কাজটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। 

আমিও মেয়েকে মোবাইল দিয়েছি এসএসসির পর, ১৭+ বয়সে। ওর স্কুল লাইফে অনলাইন গেমস খেলতে দেইনি। সবসময় ক্রিয়েটিভ গেমস, লিখালিখি, বইপত্র, আবৃত্তি, আর্ট এসবে ব্যস্ত রেখেছি। সাথে কুরআন আর কুরআন এর তাফসির। নামাজ, রোজা, তাহাজ্জুদ, কুরআন সব ভাল অভ্যাসই আছে৷

কিন্তু এরপরেও মোবাইলে বা ল্যাপটপে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। ৩ ঘন্টা নামকাওয়াস্তে অনলাইন ক্লাসের পর সারাদিন আর তেমন কিছুই করার থাকে না। স্কুল কলেজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকায় সীমাহীন ক্ষতি হলো কিশোর তরুণদের।

করোনাকে সাথে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। করোনা এত দ্রুত বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন করোনার সাথে আবার শুরু হয়েছে ব্ল্যাক, হোয়াইট, ইয়েলো আর গ্রিন ফাঙ্গাস। তাই বলে দুনিয়া তো সবখানে থেমে নেই। অনেক শহরেই চলছে শিক্ষাঙ্গন।

সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও অন্তত কলেজ আর ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হোক। এরপর না হয় হাইস্কুলের কথা ভাবা যাবে। এই বছর তো এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বিশ্ব বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমাদের কিশোর-তরুণরা কি অনেকটুকু পিছিয়ে পড়ছে না?

লেখক: মাস্টার মেরিনার ও লেখক

ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসকেএস