স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতে টিআইবির ৯ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২১, ১৬:১৯

দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিল ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বিলুপ্তসহ ৯ দফা সুপারিশ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় ‘করোনাকালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আয়োজনের মূল প্রবন্ধে এসব সুপারিশ জানানো হয়।

টিআইবির সুপারিশগুলো হলো-

১. করোনাকালীন সময়ে সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে নীতি প্রণয়ন ও স্বাধীন সাংবাদিকতার সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২. অতিমারি সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তথ্যের অভিগম্যতা সহজ করতে হবে।

৩. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ এর বিতর্কিত সব ধারা বাতিল এবং ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩’ এর বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে।

৪. যে-কোনো মূল্যে করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গণহারে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সরকারের নজরদারিতে আনতে হবে এবং এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াস নিতে হবে।

৫. পেশাদারি মনোভাব নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতি আস্থা বাড়াতে গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), সম্পাদক পরিষদ, এডিটরস গিল্ড এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে।

৬. গণমাধ্যমকে জরুরি সেবাখাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবাদকর্মীদের নিয়মিত বেতনভাতা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে রপ্তানীমুখী শিল্পের জন্য ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা কর্মসূচির মতো তহবিল ঘোষণা করতে হবে।

৭. পেশাগত নিরাপত্তার পাশাপাশি শারীরিক এবং স্বাস্থ্যগত সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. তথ্য মন্ত্রণালয় নয়; বরং প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

৯. গণমাধ্যমের পরিচালনা নীতি ও সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মরত সংবাদকর্মীরা যাতে কার্যকর স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন, মালিকপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ এর সুযোগ গ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ পাশ হওয়ার ফলে স্বাধীনভাবে বাক ও মতপ্রকাশের যে আশার আলোটুকু আমরা দেখতে শুরু করেছিলাম, অচিরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে নিবর্তনমূলক ৩২ ধারায় বৃটিশ আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩’ ফিরিয়ে আনায়, তা হতাশায় রূপ নিয়েছে।’

আর্টিকেল-১৯ এর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে টিআইবি জানায়, ঢাকায় যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের মধ্যে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। মফস্বলে হামলা ও মামলার হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২১ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম, গতবছরের তুলনায় একধাপ পিছিয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, আধা সামরিক শাসিত রাষ্ট্র পাকিস্তান, সামরিক নিয়ন্ত্রাধীন মিয়ানমারসহ সর্বোপরি দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান। পাশাপাশি সর্বশেষ বিশ্ব মতপ্রকাশ প্রতিবেদনে ১৬১টি দেশের মধ্যে ১৩২তম অবস্থানে বাংলাদেশ।

আর্টিকেল-১৯ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯৮টি মামলায় ৪৫৭ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ জন সাংবাদিক।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে টিআইবির প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজামান, সিনিয়র সাংবাদিকরা যুক্ত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/কারই/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা