যেন সেই দৈত্যের ভয়ে বাগান ছেড়ে পালিয়েছে সবাই

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২১, ১৬:৩৬

আসিফ আকবর

আমি থাকি ঢাকার মগবাজার এলাকায়। প্রতিদিন আমাকে ভিকারুননিসা নুনসহ আরো কিছু স্কুলের জ্যাম ঠেলেই কাজে যেতে হতো। মাঝে মাঝে অসহ্য মনে হলেও বাচ্চাদের কলকাকলী খুব ভালো লাগতো। সবচেয়ে বেশি মজা লাগতো বাচ্চাগুলোর মায়েদের আড্ডা। স্কুলের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে একটা সোসাইটি গড়ে উঠেছিল। ওখান থেকেই ভাবীদের মধ্যে সখ্যতা আর ফাঁকে ফাঁকে বুটিক টাইপ ব্যবসাও প্রসার লাভ করেছিল। কিছু ভাইদেরও বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেয়া উপলক্ষ্যে ভাবীদের সাথে হাহা হিহি করতে দেখতাম। মোটামুটি স্কুলকে কেন্দ্র করেই একটা উৎসব মুখর নয়েজ থাকতো।

এখন আর সেই উৎসব নেই। দীর্ঘদিন বাচ্চারা স্কুলে যায় না। যেন পৌরানিক সেই দৈত্যের ভয়ে বাগান ছেড়ে পালিয়েছে সবাই। কোথাও কোনো আনন্দ নেই। জেলখানার মতো স্কুলগুলোর প্রতি আগে খুব বিরক্ত ছিলাম। বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং মেলামেশার সুযোগও ধ্বংস হয়ে গেছে। অনলাইন স্কুলের নামে তাদের হাতে এখন এন্ড্রয়েট বোমা। ফোরজি স্পীডে ঘরকুনো জেনারেশন আরো একাকীত্বের শিকার হচ্ছে। তাদের মানসিক বিকাশে সমাজ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। শহরের চেয়ে গ্রাম মফস্বলে আরো দূরবস্থা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণ আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে বাল্যবিবাহ। আমার আশেপাশেই নিয়মিত শুনি কর্মহীন মানুষের বোবা কান্না।

মগবাজারের সুউচ্চ বিল্ডিংগুলোর বাসিন্দা কমে গেছে। আবাসন ব্যবসায় ধ্বসের সাথে সাথে ফ্ল্যাট মালিকরা হারিয়েছে ভাড়াটিয়া। এরমধ্যে আমার বেগমও একজন, উনার ফ্ল্যাটেও টু-লেট ঝুলছে প্রায় ছয়মাস। যাদের ব্যাংক লোন আছে তাদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্যাস পানি বিদ্যূতসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি চার্জ। মানুষের ইনকাম বাড়ছে না, পরিচিত বেকারদের ফোনে আমিই নিজেই স্বন্ত্রস্ত। পেপারে দেখলাম সুইস ব্যাংকে প্রচুর টাকা আমাদের, যদিও রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী রেমিট্যান্সে টিকে আছে অর্থনীতি। কোথায় যেন পড়েছিলাম কমশিক্ষিত প্রবাসীরা শরীরের রক্ত ঘামে পরিনত করে দেশে টাকা পাঠায়, আর দেশের শিক্ষিতরা তাদের লুটপাট করা টাকা বিদেশে পাচার করে। কেমন যেন হয়ে গেছে ঢাকা, পুরো দেশটার অবস্থাই হয়তো এমন। চারিদিকে অশান্তির ঘনঘটা। এই দূর্যোগ কবে কাটবে কেউ জানে না। ভাইভাবীদের মধ্যে আবার আনন্দ ফিরে আসুক, বাচ্চারা মনের আনন্দে স্কুলে যাক। সর্বদা সরব এই ঢাকা শহরটা কেমন যেন ভৌতিক হয়ে গেছে। এইসময় সংঘাতের পথ ছেড়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে শিখুক মানুষ। আবার চিরপরিচিত কোলাহলে মুখরিত হোক মানুষের যাপিত জীবন। ভালবাসা অবিরাম…

লেখক: কণ্ঠ শিল্পী

ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসকেএস