দুদক চাইলে বিদেশযাত্রা রহিত করতে পারবে: সচিব

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২১, ১৭:৫২ | আপডেট: ২২ জুন ২০২১, ১৭:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া দুদক কাউকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না। তবে দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কার্যক্রমের স্বার্থে ভূতাপেক্ষ অনুমোদনসাপেক্ষে যে কারো বিদেশযাত্রা রহিত করতে পারবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

মঙ্গলবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

দুদক সচিব বলেন, ‘কমিশন চাইলেই কাউকে আর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না। কারণ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় আছে। তবে আমাদের আরও একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তদন্তের যেকোনো পর্যায়ে যদি কারো বিদেশযাত্রা রহিত করা প্রয়োজন হয় দুদকের কার্যক্রমের স্বার্থে, তাহলে দুদক সেটা করতে পারবে। তবে করার পরে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আদালত থেকে ভূতাপেক্ষিক অনুমোদন নিতে হবে।’

আদালতের রায় ছাড়া দুদক কীভাবে কাউকে সেই নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করে দুদক সচিব বলেন, ‘দুদক আগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হলে এই ক্ষেত্রে কী কারণে, কেন, বিদেশযাত্রা রহিত করা হলো, কী কারণে, কেন তার পাসপোর্ট জব্দ করা হলো কিংবা তাকে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো; সেই কারণ উল্লেখ করে আদালতকে জানালে আদালত তিনটি বিষয়ে ভূতাপেক্ষিক অনুমোদন দেবেন। একটি হলো তার বিদেশযাত্রা, একটি তার পাসপোর্ট রহিত করা, আরেকটি পাসপোর্ট নিয়ে আসা বা জব্দ করা। এটা আর কোনো জটিলতা নেই।’

দুদক সচিব বলেন, ‘কোর্টের এই রায়ের আগে যেসব ব্যক্তিকে দুদক থেকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বা বারণ করা হয়েছে, সেই লোকদের ভূতাপেক্ষিক অনুমোদনের জন্য বিজ্ঞ আদালতকে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তার ধারাবাহিকতায় অনেকগুলো বিষয়কে অনুমোদন করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। গতকালও আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আমরা আগেই তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম, এখন আদালত থেকে আবার অনুমোদন করা হলো।’

যাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুদক অনুসন্ধান করছে, সেগুলোর কী অবস্থা জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘অনুসন্ধানগুলো এখনো শেষ হয়নি। শেষ হলে আপনারা জানতে পারবেন। মামলার অগ্রগতি তো আছেই, এই মুহূর্তে ঠিক কতখানি অগ্রগতি হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না  বলে সেটা বলতে পারবো না। এছাড়া আমরা যখন এগুলো চার্জশিট দেব, আপনাদেরকে জানানো হবে।’

এর আগে বিভিন্ন সময়ে দুই শতাধিক মানুষের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক, আদালতের রায়ে সেসব নিষেধাজ্ঞা তো আর থাকছে না, এমন প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘সেগুলো বহাল আছে, আমরা শুধু আদালত থেকে অনুমোদন করে নিয়ে আসবো। তবে আদালত যদি এটা গ্রহণ না করে বা রিজেক্ট করে দেয় তখন সেটা আর ভেলিড থাকবে না। যদি অনুমোদন করে সেটা ভেলিড থাকবে।’

দুদকের তদন্তের ক্ষেত্রে আদালত থেকে অনুমতি নিতে গিয়ে সেটা দেরি হয়ে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘দেরি হচ্ছে না। আদালতে নির্দেশ অনুযায়ী দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা বা দুদক যদি মনে করে তাকে এখনই নিষেধাজ্ঞা দেয়া দরকার, এখনই পারা যাবে। করার পরে আদালত থেকে অনুমাদন নেয়া যাবে। এতে দুদকের কাজে কোনো অসুবিধা হবে না।’

২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ডের সময় যাদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছিল কিংবা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তাদের অনেককে পরে আর সংস্থাটি কেন ডাকেনি, এই বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘আমরা না ডেকে সেখানে গিয়েও কিন্তু তদন্ত করতে পারি। ডাকতে হবে সেটা কথা নয়। তবে তদন্তগুলো কোন প্রক্রিয়ায় আছে সেটা বলতে পারবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্ত কিন্তু থেমে নেই।’

বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা কেন দরকার, এমন প্রশ্নের উত্তরে দুদক সচিব বলেন, ‘এটাতো স্বাভাবিক, আমি যার বিরুদ্ধে তদন্ত করবো, তার কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে। সে চলে গেলে আমিতো তার কাছে তথ্য নিতে পারবো না। তদন্তের স্বার্থেই তাকে প্রয়োজন।’

কমিশনের আজকে মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো জানানোর মতো না। কারণ, কমিশন মনে করে একটি সিদ্ধান্ত নিলে সেটা যখন বাস্তবায়ন হয় তখন জানানো যায়। ধরেন আজকে একটি মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, মামলা করার পর আমরা জানিয়ে দেব।’

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসআর/জেবি)