ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগ শিটে এ কেমন মন্তব্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১৪:৪৬ | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২১, ২১:৪০

শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার বোর্ডে প্রার্থীদের তালিকায় কারও কারও নামের পাশে ‘অদ্ভুত’ সব মন্তব্য করার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে নিয়োগের সাক্ষাৎকার বোর্ডের এমন ঘটনা উঠেছে সিন্ডিকেট সভায়ও।

সোমবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাক্ষাৎকার বোর্ডের চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। একপর‌্যায়ে বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের কাছে থাকা সিন্ডিকেড সভার আলোচ্যসূচির ফাইল থেকে এমন মন্তব্য সম্বলিত পাতা দুটি সভার শেষ দিকে ছিঁড়ে নেয়া হয়।

এদিকে প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন পরস্পরের আত্মীয় সম্পর্কীয় হওয়ায় যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ কেউ চাকরির জন্য সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে ডিঙিয়ে তার চেয়ে কম যোগ্যতার একজন প্রার্থীকে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকাটাইমসের কাছে আসা নথি থকে দেখা যায়, শিক্ষক নির্বাচনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের তালিকায় তাদের কারও নামের পাশে ‘নারী বেশি হয়ে যাবে’, কোথাও আবার প্রার্থীর নামের পাশে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে আরেক প্রার্থীর হিসেবে।

জানা গেছে, সোমবারের সিন্ডিকেট বৈঠকে এসব মন্তব্য করা সাক্ষাৎকার বোর্ডের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে মন্তব্য সম্বলিত পাতা সভা শেষে ছিঁড়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি যাতে বাইরে জানাজানি না হয় সেজন্য সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে অনুরোধ করা হয়।

নথির তথ্যমতে, গত বছরের ৫ অক্টোবরের বিজ্ঞাপন অনুযায়ী রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে ৬টি আবেদনের মধ্যে ২ জন (চারজন অনুপস্থিত) এবং প্রভাষক পদে ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

প্রো-ভিসির অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকার বোর্ডে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ ও অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুন।

সাক্ষাৎকার শেষে মো. আতাউর রহমান ও শতাব্দী রায়কে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর প্রভাষক হিসেবে নির্বাচিত হন মাকসুদা পারভীন, রায়হানা আফরোজ ও মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিন্ডিকেট সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, বৈঠকের অন্যান্য প্রসঙ্গে আলোচনার মাঝে শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারে প্রার্থী তালিকায় এমন মন্তব্য লেখার বিষয়টি উঠে আসে। এ ধরনের মন্তব্য করায় একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরেক জন সদস্য বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ হবে তার যোগ্যতা দিয়ে। এখানে কে কার স্বামী, কে কার স্ত্রী সেটা অযোগ্যতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়া অনুচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দম্পতি শিক্ষক হতে পারবেন না এমন কোনো নির্দেশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনেক শিক্ষক আছেন যারা স্বামী-স্ত্রী কিংবা অন্য আত্মীয়তা সম্পর্কের, ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকে তাদের যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষক হয়েছেন। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সাক্ষাৎকার বোর্ডে প্রার্থীদের নিয়ে এমন মন্তব্য করা দুঃখজনক।’

মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া একজন নারী প্রার্থীর নামের পাশে লেখা হয়- ‘মেয়ে বেশি হয়ে যাবে’। বিষয়টি নিয়েও সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনা হয়। একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যেখানে দেশ নারীর ক্ষমতায়নের দিকে জোর দিচ্ছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একজন নারী শিক্ষক হন তাতে আপত্তি কোথায়?’ শিক্ষক নিয়োগে কারও কারও এমন মানসিকতায় বিস্মিত তিনি।

নথিতে আরও দেখা যায়, যার নামের পাশে ওই মন্তব্য করা হয়েছে, তাকে নেওয়া না হলেও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় একজনকে নির্বাচিত করা হয়।

একজন প্রার্থীর ঘরে মন্তব্য লেখা হয় অমুকের স্বামী। কারও স্বামী হলে কি তিনি নির্বাচিত হওয়ার জন্য অযোগ্য হয়ে যান? প্রশ্ন একজন সিন্ডিকেট সদস্যের।

এ ব্যাপারে জানতে সাক্ষাৎকার বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সাক্ষাৎকার বোর্ডের অন্য একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাক্ষাৎকার বোর্ডে সবার শিট আলাদা ছিল, তাই কে কী লিখেছেন তা জানি না। যদি কেউ কোনো মন্তব্য করে থাকেন সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’

তবে সিন্ডিকেট বৈঠকে ইন্টারনাল থেকে শিক্ষক না নিয়ে বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বলে শুনেছেন সাক্ষাৎকার বোর্ডের এই সদস্য। বলেন, ‘বোর্ড এবং বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিন্ডিকেটকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/বিইউ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :