শত বছরেও একটি সেতু পায়নি আত্রাইপারের মানুষ

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২১, ২০:৪৪

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ)

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি ও খেলনা ইউনিয়নের মাঝে আত্রাই নদীর উপরে শত বছর ধরেও নির্মিত হয়নি কোন সেতু। একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষসহ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো আর বর্ষা এলে ভরা নদীতে নৌকায় তাদের একমাত্র ভরসা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এপার-ওপার রয়েছে ভগবানপুর, দেবীপুর, খেলনা, লালমাটি নলপুকুর, রাঙ্গামাটি বাজার, উদয়শ্রীসহ কয়েকশ গ্রাম। এসব এলাকার প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নসহ উপজেলায় আসা-যাওয়া বা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের জন্য নদীর পাড়ে এসে নৌকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নৌকায় যাত্রী কম হলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর নদী পার হতে পারেন সাধারণমানুষ। সময়মতো ঘাটে নৌকা না থাকায় দূরদূরান্ত মানুষের নদী পাড়াপারসহ স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চকহাড়া খেলনা ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ ক্ষোভের সাথে বলেন, ছোটবেলায় বাপ-দাদার মুখে শুনেছি এখানে ব্রিজ হবে, হবে হচ্ছেই। এ এলাকার মানুষের নদী পারাপার কত যে কষ্টের তা বোঝাতে পারব না। এ অঞ্চলে এতগুলো মানুষ দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে নদী পারাপারের কতইনা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে, তবুও দেখার কেউ নেই। সরকারের উচিত আমাদের দিকে একটু সুনজর দেওয়া।

নদীর দুই পাশেই রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি ক্লিনিক। নদী অধ্যুষিত গ্রামগুলো পলিমাটি হওয়ায় এখানে শাকসবজিসহ গম, শসা, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, ঝাল, আদা, রসুন, কলা, ধানসহ সব ধরনের চাষাবাদে উপজেলাটি গুরুত্ব বহন করলেও রাস্তাঘাটসহ ভালো কোন অবকাঠামোনা থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ এলাকার চাষিদের। একটি ব্রিজের অভাবে এসব এলাকার কৃষকের চাষ করা ফসল বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে হয় উল্টো পথে। শুধু তাই নয়, রাতবিরাতে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়া দুষ্কর হয়ে পরে।

অন্যদিকে ওইসব এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি আত্রাই নদীর উপর ব্রিজটি নির্মিত হলে ধামইরহাট উপজেলার সাথে নদী অধ্যুষিত ওইসব এলাকার কয়েক হাজার গ্রামসহ নজিপুর ও সাপাহার উপজেলার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ নিমিষেই শেষ হয়ে যাওয়াসহ প্রতিবেশী তিন উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি পণ্যে এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে এমনটাই মনে করছেন ওই এলাকার সুধীমহল।

তালতলী ভগবানপুর ঘাটের নৌকার মাঝি আব্দুল গোফফার বলেন, প্রায় তিরিশ বছরের অধিক সময় ধরে নৌকায় লোকপাড়া পার করি। ভরা নদীতে লোক পারাপার করতে বহুবার নৌকাডুবি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর উপর ববাঁশের চাটার উপর দিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ছাড়া বড়ো কোনো যানবাহন পার হতে পারে না।

আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, কৃষি চাষাবাদে এ অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। আমাদের এমপি মহোদয় শহীদুজ্জামান সরকারের নিজ উদ্যোগে আত্রাই নদীর উপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্রিজটি নির্মিত হলে শুধু ধামইরহাট নয় নজিপুর সাপাহারসহ তিনটি উপজেলার সাথে যুগান্তকারী মেলবন্ধনের সৃষ্টি হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, এ ধরনের দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য সুনিদিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথমেই ঠিকাদারের পক্ষ থেকে একটি অফিসঘর ও একটি লেবার-শেড নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বের মাটি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃযাচাই করা হয়েছে। এখন সেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনপতি রায় বলেন, সেতুটির নকশা পরিবর্তন করায় এক বছরের মতো দেরি হয়ে গেছে। তবে বর্তমানে সেতুটির নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/এলএ)