দেড় যুগের বাঁশের সাঁকোটি এখন মরণ ফাঁদ

সুশান্ত মল্লিক, কেশবপুর (যশোর)
 | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২১, ১৬:৫৪

যশোরের ত্রিমোহিনী বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের ওপর দেড় যুগ আগের তৈরি বাঁশের সাঁকোটি কেশবপুরসহ তিন উপজেলাবাসীর কাছে এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৩০০ ফুট লম্বা জরাজীর্ন সাঁকোটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা। এতে ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনাও।

লেখাপড়া, ব্যবসা, চাকরিসহ যেকোনো প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কেশবপুর, কলারোয়া, মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ত্রিমোহিনী বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদ পারাপার হতে হয়। এক সময় নৌকায় করে পথচারীদের এই নদী পারাপর করতে হত। নদী পারাপারে জনসাধারনের সীমাহীন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০১ সালে স্থানীয় লেয়াকত আলী জমিদার, আব্দুল জব্বার ও মৃত আমির সরদারসহ ২০/২৫ জন মিলে পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে এ সাঁকো নির্মাণ করেন।

নির্মিত সাঁকোটির জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত তৎকালীন কেশবপুরের সাংসদ আব্দুল ওহাব সাহেব ২০ হাজার টাকা ও দেয়াড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম হোসেন ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এবং নদের উপর জনস্বার্থে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

এরপর দীর্ঘ ১৯ বছরে সরকারের পালাবদল হলেও কপোতাক্ষ নদের দু-পাড়ের মানুষের কাছে সেতুর স্বপ্ন এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। তাই প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয় সাধারণ মানুষদের।

এদিকে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণের জন্য কোনো জনপ্রতিনিধি উদ্যোগ না নেওয়ায় জনসাধারনের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। একটি সেতু নির্মাণ হলে কেশবপুর, কলারোয়া, মনিরামপুর, উপজেলার লোকজনের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন উপজেলার অর্ধ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর কাছে টলমলে ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো রীতিমত এক আতঙ্কের নাম। এই সাঁকোর উপর দিয়ে তিন উপজেলার ২১ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। জীবিকার তাগিদে এলাকার লোকজন এবং শিক্ষার তাগিদে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় এই সাঁকো দিয়ে। কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মাথায় এবং কাঁধে করে ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে।

ত্রিমোহিনী বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল আলিম বাবুল বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার, দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান (মফে) ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবর আলী সরদার (মধু) ,কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের হারুন অর-রশীদসহ অনেকেই তাদের প্রতিদিনের কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, সেতু না থাকায় যানবাহনের অভাবে কাঁধে ও মাথায় করে সবজি, ধান, পাট নিয়ে এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ইতোমধ্যে অনেকেই সাঁকো থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাছাড়া বর্ষা মৗসুমে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়।

কপোতাক্ষ নদের দুপাড়ের ভুক্তভোগীদের একটাই দাবি, সেতু নির্মাণ। এটি নির্মাণ হলে কেশবপুর, মনিরামপুর, কলারোয়ার বিভিন্ন পেশার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে এবং খুলনা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার কমে যাবে বলে জানান তারা।

স্থানীয়রা জানান, জনস্বার্থে প্রতিবছর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাঁকোটি সংস্কার করা হয়ে থাকে। নদের উপর দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ দুইপাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি। তারা দ্রুত কপোতক্ষ নদের উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন। এমনকি সেতু তৈরির জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেক দপ্তরে আবেদনও করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :