করোনায় হারানো স্বাদ-গন্ধ ফেরানোর কৌশল
প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২১, ১৪:৪৭ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২১, ১৫:০১
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে উপসর্গ হিসাবে প্রথমেই দেখা যেতে পারে স্বাদ বা গন্ধহীনতা। আমেরিকার একটি ম্যাগাজিন অনুসারে, ছয় মিলিয়ন করোনা আক্রান্তের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি সংক্রমণে প্রায় ৮৬ শতাংশ রোগী তাদের গন্ধের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে স্বাদের অনুভূতি হারিয়ে ফেলা রোগীর সংখ্যায় প্রায় একই।
করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীরা জানিয়েছেন, তাদের স্বাদ-গন্ধ চলে গিয়েছে। বেশ কিছু মানুষের এই স্বাদ-গন্ধ ফিরতে দীর্ঘদিন সময় লাগছে। বাকি সব উপসর্গ চলে যাওয়ার পরো হয়তো গন্ধ পাচ্ছেন না অনেকে।
গন্ধ ফেরানো চিকিৎসা তেমন কিছু নেই। তবে বিদেশে চিকিৎসকদের একাংশ নির্ভর করেন ‘স্মেল ট্রেনিংয়’এর উপর। মানে গন্ধের প্রশিক্ষণ। এটি মূলত এক ধরনের থেরাপি যেখানে কিছু ধরনের জোরাল গন্ধ অল্প সময়ের বিরতিতে শোকানো হয়। যেমন লবঙ্গ, গোলাপ, লেবু এবং ইউক্যালিপটাস পরপর শোকানো হয়। এবং সেটা বারবার চলতে থাকে। এতে নাকের স্নায়ুগুলো জেগে ওঠে এবং মস্তিষ্কে বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়। যেহেতু ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেলে বা কোনও রকম ভাইরাল জ্বর এব সর্দি কাশিতে এই পদ্ধতি কাজে লেগেছে। অনেকেই আশা করছেন করোনার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকরী হবে।
এই পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং নিখরচে করতে পারেন আপনি। যদি বাড়িতে ৪টি উপকরণ নাও থাকে, তাহলেও কফি, ভ্যানিলা, পুদিনাপাতা, জয়ত্রী দিয়েও আপনি এই পদ্ধতি যাচাই করে দেখতে পারেন। গবেষণায় জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন একই রকম ৪টি উপকরণের গন্ধ শোকার পর সেই গন্ধের ধরনে যদি বদল আনতে পারেন, তা হলে আরও তাড়াতাড়ি কাজ দেবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের কিছু কিছু অভ্যাস রয়েছে যা ঘ্রাণজনিত স্নায়ুগুলোকে উদ্দীপ্ত করবে এবং তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সহায়তা করবে:
টক
যদি আপনি আচার, লেবু বা তেঁতুলের মতো টক জাতীয় কিছু দিয়ে আপনার খাবার শুরু করেন তবে এটি আপনার লালা গ্রন্থিগুলিকে উদ্দীপিত করবে। এটি আপনার বাকি খাবারের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
উমামি
জাপানি ভাষায় উমামির আক্ষরিক অর্থ "স্বাদে আসক্তি"। এটি এখন পঞ্চম স্বাদ (মিষ্টি, টক, তেতো এবং নোনতা সহ) হিসাবে বিবেচিত হয়। সয়া সস, রসুন, মিসো, মাশরুম, আলু এবং ট্রাফলসের মতো উমামি খাবারগুলোও আপনার লালা গ্রন্থি জাগাতে সাহায্য করে।
স্পাইসি
ক্যাপসাইসিন, অনেক মশলাদার খাবারের প্রধান উপাদান, এটি ঘ্রাণজনিত ও স্নায়ু সম্পর্কিত গ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতাকে উন্নত করার ক্ষমতা রাখে।
চকোলেট
চকোলেট খেতে কোনও অজুহাত লাগে না। বিশ্বাস করুন বা না করুন, চকোলেটের স্বাদই একমাত্র এমন স্বাদ, যা আপনি স্বাদ হারিয়ে ফেললেও পেতে পারেন।
টেক্সচার
উপরিউক্ত আলোচ্য বিষয়গুলো অনুসারে আপনি আপনার খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের টেক্সচার ব্যবহার করতে পারেন। যদি সফ্ট টেক্সচার আপনার জন্য সমস্যা হয় তবে আপনি কিছু ক্রাঞ্চি খাবারও খেতে পারেন। কখনও কখনও পানযোগ্য খাবার খাওয়া বেশি সহজ হয়।
তাপমাত্রা
সাধারণত করোনা রোগী গরম খাবারের তুলনায় ঠাণ্ডা খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে এটি গরম না করেই আপনি খেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি ঠাণ্ডা স্যুপ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
মিসো লেমন নুডলস স্যুপ
স্বাদ ফেরানোর উপায় হিসাবে মিসো লেমন নুডলস স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। মিসো হ'ল খাঁটি মটরশুটি (সাধারণত সয়াবিন) থেকে তৈরি নোনতা পেস্ট যা কয়েক হাজার বছর ধরে জাপানি ডায়েটে প্রধান উপাদান। মিসো একটি সুপারফুড যাতে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে। এটি ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, প্রোটিন, তামা এবং জিঙ্কের একটি উত্স। মিসো যে কোন সুপারশপে পাবেন। রেসিপিটি আপনার স্বাদের পরিবর্তন ও উন্নতি অবশ্যই করবে।
উপকরণ
অলিভ অয়েল: ১ চা-চামচ
পেঁয়াজ কুচানো: ১টি
রসুনের কোয়া:৪টি
ভেজিটেবিল ব্রথ (৫ কাপ পানি+৫ চামচ ব্রথ পাউডার ব্যবহার করা যায়)
রান্না না করা করা পাস্তা: ১.৫ কাপ
একটি লেবুর রস
মিসো: ২ টেবিল চামচ
লবণ, মরিচ স্বাদ মতো
পদ্ধতি
অল্প আঁচে মাঝারি আকারের পাত্রে তেল গরম করুন। এক চিমটি নুনের সঙ্গে পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে দিন। স্বচ্ছ না হওয়া পর্যন্ত কয়েক মিনিট ধরে রান্না করুন। ২০-৩০ মিনিটের জন্য ঝোলটি সিদ্ধ করুন। এবার এতে ছোলা এবং পাস্তা যোগ করুন- প্রায় ১০ মিনিট ধরে রান্না করুন। আঁচ কমিয়ে নিন। এবার মিসো যুক্ত করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে নাড়াচাড়া করুন যাতে এটি ঝাঁঝালো না হয়। লেবুর রস, স্বাদ মতো লবণ এবং মরিচ দিন। কিছু ভাজা পেঁয়াজ সহ অবিলম্বে পরিবেশন করুন।
আপনার স্বাদের কুঁড়িগুলোর পুনরায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। যদি এই সপ্তাহে, কোনও নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ না থাকে তবে কয়েকদিনের মধ্যে আবারও চেষ্টা করুন।
(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/আরজেড/এজেড)