২০ হাজার বছর আগে করোনার উৎপত্তি!

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২১, ০৮:২২

সারাবিশ্বে প্রায় দুই বছর ধরে মানুষের জীবনে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে করোনাভাইরাস। সম্প্রতি মার্কিন এবং অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণায় জানা গেল, প্রায় ২০ হাজার বছর আগে প্রথম মানুষের সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংঘর্ষ হয়েছিল।

পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর মহামারি, যার ফলে মানুষের ডিএনএ-তেও তার ছাপ থেকে গিয়েছে। আর এ থেকেই করোনার জিনগত অভিযোজনের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।

'কারেন্ট বায়োলজি' নামে বৈজ্ঞানিক জার্নালে গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ২০ হাজার বছর আগে প্রথম করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল। পূর্ব এশিয়ার মানুষের তখন কোনও জনবসতি ছিল না। তারা শিকার করে আর গাছ থেকে পাড়া ফলমূল খেয়ে বেঁচে থাকত।

বর্তমান করোনা মহামারির মোকাবিলা করার জন্য অতীতের বিভিন্ন মহামারি এবং মানুষের উপর সেই মহামারিগুলোর প্রভাব বুঝতে, গবেষকরা বিশ্বের ২৬ টি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রায় ২,৫০০ জনের জিনোম নিয়ে গবেষণা করেছেন।

গবেষকরা জানান, এইসব জিনোমে হাজার হাজার বছরের মানব বিবর্তনের তথ্য ধরা থাকে। সেই তথ্য থেকেই তারা এই একেবারে প্রথম করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ভাইরাসরা বংশবিস্তারের জন্য নিজেদের অনুলিপি তৈরি করে। তবে তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের কাছে থাকে না। এর জন্যই তাদের একটি হোস্ট দরকার হয়। তারা হোস্টকে সংক্রমিত করে এবং হোস্টের শরীরে নিজেদের অনুলিপি তৈরি করার কাজ শুরু করে। মানুষের কোষগুলো যে এইভাবে ভাইরাসরা 'হাইজ্যাক' করে, তার প্রভাব পড়ে জিনোমে থাকা তথ্যে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে সেই চিহ্নগুলো পর্যবেক্ষণ করা এখন অত্যন্ত সহজ। আর তাতেই 'দৃঢ় প্রমাণ' পাওয়া গিয়েছে যে, এর আগেই মানুষ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিল এবং একসময় তার সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছিল।

গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনার জিনগত সংকেতগুলো চীন, জাপান এবং ভিয়েতনামের পাঁচটি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। তবে, তার মানে এই নয়, যে ২০ হাজার বছর আগে এই তিনটি দেশেই মহামারিটি সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, এই ধারণাকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট তথ্য এখনও তাদের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

তাদের গবেষণায় যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হল, এই মহামারির ফলে এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি উপকারী রূপান্তর ঘটেছে, যা পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের সেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করেছিল। এই রূপান্তরটি যাদের শরীরে ঘটেছিল, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছিল। ফলে ধীরে ধীরে ওই মিউটেশন থাকা মানুষের সংখ্যাই বেড়েছিল। তাদের বংশধরদের জিনোমে তা খুব স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে ববলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণায় একটা উদ্বেগজনক দিকও ধরা পড়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী ডাক্তার ডেভিড এনার্ড জানিয়েছেন, এখনই যা চলছে, অর্থাৎ নতুন করোনাভাইরাস মহামারি, তা কয়েক প্রজন্ম ধরে চলতে পারে, তাদের গবেষণায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ মানব জিনে অ্যান্টিভাইরাল মিউটেশন একদিনে ঘটে না। এই বিবর্তনটি সম্ভবত কয়েক শতাব্দী ধরে ঘটেছিল।

গত ২০ বছর ধরে তিন রকমের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), সার্স এবং মার্স মানবজাতিকে সংক্রমিত করতে অভিযোজিত হয়েছে। এই গবেষণার রিপোর্ট বলছে, বাদুড় বা অন্য কোনও প্রাণী থেকেই এই তিন রকমের করোনা ভাইরাস মানবদেহে এসেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :