শেষ রক্ষা করতে পারলাম না

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২১, ১৫:৪৪

নয়ন ওঝা

কিছুদিন আগের কথা। অচেনা একটি নম্বর থেকে আমার ফোনে কল আসল। প্রথমেই বলে উঠলেন ডাক্তার আব্বা কেমন আছেন? আমি একটু চমকে উঠেছিলাম কারণ আমি ডাক্তার নই আমি একজন প্যারামেডিক। নির্ধারিত অফিস সময়ের পরে আমি অসহায় ও স্বল্প আয়ের মানুষদের বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকি। আমার প্রতিষ্ঠিত ওঝা হোম কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। তারপরও বললাম হ্যাঁ আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

 

তিনি বললেন, ডাক্তারদের কি কেউ ভালো থাকলে ফোন করে? আমি বললাম আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হারুন-অর-রশিদ। বয়স ৬৫। আপনার বাবার কাছ থেকে নম্বর নিয়েছি। আমার শরীর খুব খারাপ ডাক্তার দেখিয়েছি, ডাক্তার আমাকে স্যালাইন দিতে বলেছেন।

 

পরবর্তীতে আমি বললাম আচ্ছা আমি আমার অফিস শেষ করে আপনার সঙ্গে দেখা করব এসে। আপনি কোথায় থাকেন? আমি আপনাকে স্যালাইন দিয়ে দেব। সে বলল আব্বা আমি শর্মা হাউজ বিল্ডিংয়ের নিচেই থাকি।

আমি অফিস শেষ করে তার বাসায় গিয়ে দেখি সে খুব অসুস্থ, এবং সে অনেক রোগের আক্রান্ত একজন রোগী তার কোমর ও মেরুদন্ডের হার ক্ষয়জনিত রোগ ছিল এবং উচ্চ মাত্রায় অ্যাসিডিটি ছিল। তার একটি চোখ নষ্ট ছিল এবং আমি  যখন ওনাকে স্যালাইন দিতে গিয়েছিলাম তখন তিনি রক্তশূন্যতার কারণে অনেক দূর্বল হয়ে পরেছিলেন এবং সে বারে তিনটি স্যালাইন দিয়েছিলাম। একদিন পর পর করে।

 

সে সুস্থ হয়ে উঠেছিল এবং সে বার বার বলেছিল বাবা এইবারের মত আমাকে বাঁচালেন। এর পরে অনেক বার আমি তাকে দেখতে গিয়েছি টুকিটাকি তার সব ধরনের সুবিধা-অসুবিধার কথা আমাকে বলতেন। আমি যতটুকু সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করছি।

 

ঘটনার দুই তিন দিন আগেও সে আমাকে খবর পাঠিয়েছিলেন, আমি যেনো তার সাথে দেখা করি। সে আবার অসুস্থ অনুভব করছে এবং আবার  স্যালাইন নেবেন। কিন্তু আমার অনবরত অফিস ডিউটি থাকায় আমি তার সাথে দেখা করতে যেতে পারিনি, ভেবেছিলাম একটু সময় সুযোগ করে আমি তার সাথে দেখা করতে যাব।,

 

লোকটির সাথে আমার যতবার দেখা হয়েছে সে সবসময় আমাকে ডাক্তার আব্বা বলে ডাকতেন এই বিষয়গুলো আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।

 

মগবাজার ট্রাজেডির দিন শর্মা হাউজেই ছিলেন এবং সে ওই ভবনটির কেয়াকটেকার ছিলেন ওই ভবনের সকল দায়-দায়িত্ব তার উপরেই ছিল। আমি যতটুকু জানি তার এক ছেলে এবং দুই মেয়ে সে আমাকে বলেছিলেন তার একজন মেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নার্সিংয়ে পড়াশোনা করছেন এবং আরেক মেয়ে বাড্ডায় থাকতেন। 

 

সে এখন মৃত আমি তার এমন মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সৃষ্টিকর্তার নিকট তার জন্য অনেক অনেক প্রার্থনা রইল। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

 

লেখক: কমিউনিটি প্যারামেডিক

প্রতিষ্ঠাতা- ওঝা হোম কেয়ার সার্ভিস।