বাসা টু হাসপাতা‌লে সময় কাট‌ছে রওশন এরশা‌দের

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ১৩:৩২ | প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০২১, ১০:২০

অসুস্থতা পিছু ছাড়‌ছে না রওশন এরশা‌দের। ত‌বে বড় কিছু নয়, বয়‌সের কার‌ণে নানা‌বিধ শারী‌রিক সমস্যায় ভুগ‌ছেন জাতীয় সংস‌দের বি‌রোধী দলীয় এই নেতা। ক‌য়েকদিন পরপরই যে‌তে হ‌চ্ছে হাসপাতা‌লে। বাসা থে‌কে হাসপাতাল, হাসপাতাল থে‌কে বাসা-এই ক‌রে দিন কাট‌ছে তার। তাই সংস‌দের চল‌তি বা‌জেট অ‌ধি‌বেশ‌নেও থাক‌তে পা‌রে‌ননি তি‌নি।

জাতীয় পা‌র্টির প্রধান পৃষ্ঠ‌পোষক রওশন এরশাদের একা‌ধিক ঘনিষ্ঠ সূ‌ত্রে জানা গেছে, বড় ধরনের কোনো অসুস্থতা না থাকলেও বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতায় বেশ কাবু হয়ে পড়েছেন এরশাদপত্নী। এখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক এই ফার্স্ট লেডি।

ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রওশন এরশাদের ছেলে সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহী (সাদ এরশাদ)।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে তাকে দলের নেতারাও কেউ দেখতে যেতে পারছেন না। যদিও দলের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতা নিয়ে খুব একটা উদ্বেগ চোখে পড়েনি। সুস্থতা কামনায় আনুষ্ঠানিক কোনো দোয়ার আয়োজনের কথা শোনা যায়নি। সাদ এরশাদ মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসছেন। এছাড়া সার্বক্ষণিক তাকে দেখভালের জন্য লোক আছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাতে অসুস্থ বোধ করায় ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয় রওশন এরশাদকে। তখন গ্যাস্ট্রিক ও পানিস্বল্পতাজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রায় মাসখানেক পরে বাসায় ফিরেছিলেন। ২৫ দিন পর ২৩ মে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে কয়েকদিন বাসায় মোটামুটি ভালোই ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। কিন্তু সম্প্রতি আবার অসুস্থ বোধ করলে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়।

সাদ এরশাদ বলেন, তার বড় সমস্যা হলো দুর্বলতা। এরসঙ্গে বার্ধক্যজনিত নানাবিধ সমস্যা তো আছেই। সে হিসেবে খুব ভালোও বলা যাবে না আবার খুব একটা খারাপও বলা যাবে না। বাজেট অধিবেশনের সমাপনী‌তে যে‌তে পা‌রেন তি‌নি: দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে বেশ সতর্কভাবে চলাফেরা করতেন রওশন এরশাদ। দলের নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের খুব একটা প্রয়োজন না হলে ডাকতেন না।

২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে টিকাও নিয়েছেন। কিন্তু করোনা থেকে নিরাপদ থাকলেও অন্য অসুস্থতায় সংসদ, দলীয় কার্যক্রম সব কিছু থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাকে। তবে হাসপাতালে থাকলেও বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিন অর্থাৎ ৩ জুলাই তার সংসদে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিরোধী দলীয় নেতার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, মঙ্গলবার রওশন এরশাদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এমন কথা শোনা যাচ্ছিলো। এখন শুনতেছি ৩ জুলাই আসতে পারেন। সব নির্ভর করবে সুস্থতার উপর।'

জানতে চাইলে সাদ এরশাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'তিনি তো সংসদে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এবার যেতে পারেননি। শেষ সময় গেলেও যেতে পারেন। কিন্তু নি‌শ্চিত করে বলা সম্ভব না। কারণ এখনো তো তিনি হাসপাতালে।' সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে রওশনের এরশাদের বিয়ে হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন তারা। পরে ১৯৮৭ সালে সাদ এরশাদ তাদের ঘর আলো করেন বলে জানান তখনকার রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও ফার্স্ট লেডি রওশন।

রাজনীতিসহ নানা কারণে রওশনের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে এরশাদ ২০০০ সালে বিদিশাকে বিয়ে করেন। বিদিশার কোল জুড়ে আসে এরিক এরশাদ। তার বছর তিনেকের মধ্যে বিদিশার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন এরশাদ। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ থাকাকালেই বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ। একাদশ সংসদেও তিনি বিরোধীদলীয় নেতা। এরশাদ ও রওশনকে নিয়ে জাতীয় পার্টিতে দুই বলয় সব সময় কাজ করেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সেটি প্রকাশ্যে আসে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ও এই মেরুকরণ বহাল ছিল। তবে এরশাদের জীবিতকালে রওশন এরশাদ দলে দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে সব সময় গণ্য হয়েছেন। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর সেই অবস্থান আর নেই রওশন এরশাদের। দলীয় প্রধান এরশাদ তার ভাইকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উত্তরাধিকার দিয়ে যান। এ নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি। শেষমেশ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। তবে ওই সময়ে সৃষ্ট বিরোধ এখনো জাতীয় পার্টিতে বহাল আছে। রওশনপন্থি হিসেবে একদল কেন্দ্রীয় নেতা আছেন। আবার বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহম্মদ কাদেরেরপন্থিও একদল নেতা আছেন। আবার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে দুই বলয়ে প্রভাব রাখেন এমন নেতাও জাতীয় পার্টিতে আছে।

জানা গেছে, আলাদা বলয় থাকার কারণেই রওশন এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে শীর্ষ নেতাদের খুব একটা ভাবনা নেই। দলে তেমন আলোচনাও নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'ম্যাডামের খুব বড় ধরণের অসুস্থতা নেই জেনেছি। যেসব সমস্যা তা আসলে বার্ধক্যজনিত। আবার তার চিকিৎসা চলে যেখানে সেখানে চাইলেও সবাই সবসময় যেতে পারেন না।'

ঢাকাটাইমস/১ জুলাই/বিইউ/এইচএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :