কেউ জানে না আগামীকাল কি হবে!

ফারহাত জাহান শিরিন
 | প্রকাশিত : ০২ জুলাই ২০২১, ১৫:৫৭

চরম অপরাধে জর্জরিত সেই জঘণ্য অপরাধীও সময়ের কোনো এক সময় ভালো হয়ে যেতে চান। প্রায় সব মানুষই জীবনের প্রতিটি স্টেজ এ ভালো হয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেব।কেউ কেউ একই ভুল বারবার করেন, আবার কেউ নতুন নতুন ভুল করে জীবন পার করেন। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি পাপী নিজের পাপের দায় হয় অন্যের উপর দাঁড় করান অথবা কোনো অজুহাত দেন। সেই একই ব্যক্তিই যখন একা নিজেকে প্রশ্ন করেন, উত্তর পেয়ে যান। প্রায় মানুষই মনে মনে মাঝে মাঝে নিজেকে বলেন,ভালো হয়ে যাব!

আজ দুপুর থেকে ভালো হয়ে যাব। আজ সন্ধ্যার পরে ভালো হয়ে যাব। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে ভালো হয়ে যাব। এই সেমিস্টার ফাইনালের পরে ভালো হয়ে যাব। সামনের নতুন বছর থেকে ভালো হয়ে যাব। বিয়ের পরে ভালো হয়ে যাব। সন্তান হলে ভালো হয়ে যাব। হজ করে ভালো হয়ে যাব। এটাই শেষ সিগারেট। এর পরেই সিগারেট ছেড়ে দেব। এটাই শেষ দুই নম্বরি, কিছু কামিয়ে এরপর ভালো হয়ে যাব। যে কোনো উপায়েই হোক কাজটা যদি একবার হয়ে যায় এরপর ভালো হয়ে যাব।

এভাবে আমাদের আর ভালো হয়ে হওয়া উঠে না। প্রতিদিন পরাজিত হয়ে ঘুমাতে যাই। শয়তানকে জিতিয়ে দিয়ে আল্লাহকে নাখোশ করে ঘুমাতে যাই। পরের দিন আবার সেই একই গল্পের পুনরাবৃত্তি।

একটা সত্য ঘটনা বলি -

মদীনা শহর। তখনও মদ হারাম হয় নি। অনেক সাহাবী মদ এর ব্যাবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। মদের কেনাবেচা দেদারসে চলত। আল্লাহ ওহী পাঠালেন, মদ হারাম হওয়া নিয়ে।

‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারক সমূহ শয়তানের নাপাক কর্ম বৈ কিছুই নয়। অতএব এগুলো থেকে বিরত হও। তাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। শয়তান তো কেবল চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হতে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করতে। অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?” (সুরা মায়েদাহ: আয়াত ৯০-৯১)

এরপর যা হলো তা কল্পনাতীত। যিনি যে অবস্থাতে ছিলেন সেখানেই মদ ছেড়ে দিলেন। যাদের স্টোর রুম ভর্তি মদের বোতল ছিল, সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেললেন। এত টাকার ক্ষতি করেও মদের বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন মদীনার রাস্তা।

আমরা তাদের নামের শেষে অযথা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুম বলি না। আল্লাহ তাদের উপরে আসলেই রাজী হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের ‘শুনলাম আর মেনে নিলাম’ এই মনোভাব আল্লাহ বেশি করে পছন্দ করে নিয়েছিলেন। আমাদের জমানায় মানুষ হয়ত জায়েজ, নাজায়েজ এর ফতোয়া খুঁজত।

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা খুঁজত। অন্য কোনো উপায় খুঁজত। তাঁদের কাছে খবর পৌঁছাতে হয়ত সময় লাগত। কিন্তু, মেনে নিতে দেরি হত না। কোন গড়িমসি করতেন না। গভীর রাতের সময় টা অন্যরকম। আমরা আমাদের প্রিয়জনের জন্য গভীর রাত অব্দি খাবার নিয়ে জেগে থাকি। কখন আসে সেই অপেক্ষা করি। আমরা অসুস্থ হয়ে গেলে কেউ যদি ফোন করে অথবা সশরীরে এসে খবর নেয়, আমরা খুব আনন্দিত হয়।

তেমনিভাবে আল্লাহর কাছে প্রিয় সময়টা হলো গভীর রাত। তাহাজ্জুদের সময়। আল্লাহ শেষ আসমানে চলে আসেন এই সময়টায়। বান্দার কিছু চাওয়ার আছে কিনা জানতে চান। আর তাহাজ্জুদের দুয়াগুলো হলো অব্যার্থ তীরের মতো।

আল্লাহ সবাইকে এই উপহার দেন না। যারা দিনের বেলায় নানারকম গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাদের আল্লাহ রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠার সুযোগ দেন না। এই সময়টা আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়িয়ে তোলার সবচেয়ে ভালো সময়।

‘ভালো হয়ে যাওয়া” যতদিন পর্যন্ত সামনের সময়ের জন্য জমা রাখবেন ততদিন আর হবে না। শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলতে থাকবে। আপনি পরাজিত হয়ে ফিরবেন। তাই যারা নামাজ শুরু করব করব করে করতে পারছেন না, তারা আল্লাহর নাম নিয়ে নামাজীদের কাতারে দাঁড়িয়ে যান। যারা সিগারেট ছাড়তে পারছেন না, ইনশাআল্লাহ ছেড়ে দিন। অনেক ভাইকে দেখেছি তারা এক ঝটকায় ছেড়ে দিয়েছেন।

যারা হারাম জিনিসের ব্যাবসায় জড়িত, ছেড়ে দিন। আল্লাহ হালালের পথ খুলে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা মানুষের মনের খবর জানি না। কিন্তু প্রতিটা মানুষ নিজে অন্তত জানে সে যে কাজটি করছে তা হয়ত আল্লাহ পছন্দ করেন না।

আল্লাহ সবাইকে একইভাবে পরীক্ষা নেন না। আমরা এখন যে কঠিন পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তা আপনার জন্যে কিছুই না। আবার আপনি যে পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন আমার জন্যে কিছুই না। একারণেই আল্লাহ আমাদের এভাবে পরীক্ষা নেন। অন্য একজন ভাই যিনি এসব পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, বের হয়ে আসতে চাইছেন-পারছেন না। তাকে আমার ঠাট্টা করা কখনই উচিৎ নয়। কারন এখন তো পুরো বিশ্ব একটা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে যাচ্ছে! বরং তার কাজে হাত লাগানো দরকার, যাতে সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আর একান্তই কিছু না পারলে তার মঙ্গল কামনা করে দুয়া করা উচিৎ! এটাই সময় নিজের অতীতের ভুল আর পাপ থেকে মাফ চেয়ে নেয়ার। এখনো তওবার দরজা খোলা, কতদিন খোলা থাকবে জানি না।

আল্লাহ নিজেই বলেছেন, কেউ জানে না আগামীকাল কি হবে, কেউ জানে না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে! সুতরাং সময় থাকতে শুধরে যায়, ভবিষ্যৎ সৎকর্মের প্ল্যান করি। ওপারের একাউন্ট এ কিছু জমাই। আল্লাহ সবাইকে শেষবারের মতো শেষদিন পর্যন্ত একজন ভালো মানুষ হিসেবে দিনাতিপাত করার সুযোগ দিন। আমিন!

লেখক:,আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা