লকডাউনের চতুর্থ দিনে চট্টগ্রামে বেড়েছে গাড়ির চাপ
লকডাউনের চতুর্থ দিনে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সড়কে বেড়েছে গাড়ির চাপ, গলিতে জটলাও লেগেছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী যান ও রিকশার চাপ। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে প্রধান সড়কে যতই তৎপরতা থাকুক না কেন, অলি-গলিতে চলছে অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরাদারি না থাকায় সাধারণ মানুষসহ কিশোর যুবকদের ভিড় দেখা গেছে অলি-গলির দোকানপাটগুলোতে। এছাড়া স্বাস্থ্যসুরক্ষা না মেনে উদাসীনভাবও রয়েছে তাদের কর্মকাণ্ডে।
রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের মুরাদপুর মোড়, প্রর্বতক মোড়, পাঁচলাইশ, ষোলশহর এবং নাসিরাবাদ ২ নম্বর গেট, জিইসি, খুলশী, লালখান বাজার এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে এমন চিত্র। এসব এলাকার প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান থাকলেও অলি গলির রাস্তায় নেই কোনো তৎপরতা। ফলে মানুষ হর হামেশায় অলিগলিতে ভিড় করছে।
নগরের পাঁচলাইশ নাসিরাবাদ তিনতলা জামে মসজিদ গলিতে দেখা গেছে সবকটা মুদি, সেলুন, দর্জির ও চায়ের দোকান খোলা। মানুষ এসব দোকান থেকে করছে কেনা-কাটা। অনেককে আবার অহেতুক ভিড় ও আড্ডায় ব্যস্ত দেখা গেছে। একই দৃশ্য খুলশী থানার ওমেন কলেজ মোড়, আল ফালাহ গলিতেও। এ এলাকার চায়ের দোকানসহ সব দোকানেই দেখা গেছে খোলা।
দোকানিরা জানান, লকডাউনে সব মানুষই বাসায়। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানে আসছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা বেচা করার চেষ্টা করছেন দোকানিরা।
একই অবস্থা নগরের ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকাসহ শেখ ফরিদ মাজার রোড সংলগ্ন এলাকাতে। সেলুন দোকানসহ, হার্ডওয়্যার প্লাস্টিকের দোকান এমনকি প্রায় চা নাস্তার দোকানে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি।
চায়ের দোকানদার মো. মিলন বলেন, ‘মানুষের কাজ বন্ধ। তাই আশেপাশের মানুষ দোকানে আসে। আমাদেরও চলতে হবে। প্রধান রাস্তায় সব গাড়ি বন্ধ। মানুষ যাবে কোথায়?’
খুলশী থানার তুলাতলি বস্তি সংলগ্ন রেল লাইনের আশে পাশের দোকান গুলোতেও একই অবস্থা। রেললাইনের দোকানগুলোতে রয়েছে কিশোরদের জটলা। এসব এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই নিম্নবিত্তের। ফলে কোনো সচেতনার বালাই নেই।
একাধিক দোকানদার জানান, বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি ডিলারগুলো দোকানে আসছে, মালপত্র দোকানে রাখতে হচ্ছে। সেজন্য হলেও তাদের দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা জানানো। আর বিষয়গুলো প্রতিপালন করবে জেলা প্রসাশন ও পুলিশ প্রশাসন। এসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে তা প্রশাসনকে জানাব আমরা।’
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মাঠে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই দিন ভোর থেকেই বন্ধ করা হয়েছে নগরের সব প্রবেশ পথ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন তারা।
সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর এই লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পাল্টে গেছে নগরের চিত্র। সড়কে নেই অন্যান্য দিনের মতো অফিসমুখী মানুষের চাপ, নেই যানবাহনের ছুটে চলা, বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হলেও পড়তে হচ্ছে চেক পোস্টের মুখোমুখি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার ভোর থেকে মাঠে কাজ করছে। উপজেলাগুলোতে ইউএনও, এসিল্যান্ড ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। অন্যদিকে মহানগরে জেলা প্রশাসনের ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৪ টিমে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। এসব টিমের কোনোটাতে বিজিবি আবার কোনোটিতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য স্ট্র্যাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি জানান, অন্যবার সেনাবাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার না করলেও এবার ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠে আটক করার সুযোগ পেয়েছে। পাশাপাশি সিএমপি ও জেলা পুলিশ ভিন্ন ভিন্ন টিমে টহলে থেকে সিনিয়র কর্মকর্তারা তদারকি করছেন।
৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাতদিন মানুষের চলাচলে ‘বিধি-নিষেধ’ আরোপ করে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর বুধবার রাতে চট্টগ্রামে সমন্বয় সভায় বসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এতে আগামী সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে সব কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করেন তারা।
(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/কেএম)