নিজের দোষও খুঁজুন

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২১, ১১:৫৩

মো. আবুল কাশেম

কয়েকদিন আগেও ভারতের শ্মশানে চিতার আগুন দেখে হা-হুতাশ করেছেন অনেকে। মাঠ-ঘাটে বানাতে হয়েছে শত শত চিতা। নদীর বালুচরে মিলেছে হাজার হাজার পোঁতা লাশ। করোনাভাইরাসের যে ভয়ংকর ধরনের কারণে এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই ধরনই এখন বাংলাদেশের শহর-গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনার শুরু থেকেই সরকারের লকডাউন বা বিধিনিষেধ খুব একটা কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর পেছনে দুটি কারণ আছে বলে মনে করি। একটি হলো- করোনা বিধিনিষেধ নিয়ে সরকারের কিছুটা ছাড়া ছাড়া ভাব এবং অপরটি হলো- আমাদের বেশি জ্ঞানী ও কোনো কিছু তোয়াক্কা না করা সাধারণ জনগণ।

ত্রাণ, ঈদে সরকারি ভাতা, অসহায়দের তাৎক্ষণিক সাহায্য, প্রকৃত অভাবীদের তাৎক্ষণিক সাহায্য করার জন্য জরুরি সেবাসহ সরকার করোনাকালে অনেকগুলো জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করেছে। তবে এসব সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনায় ঘাটতি ও তৃণমূলে দায়িত্বশীলদের খাই খাই ভাবের কারণে তা সম্পূর্ণভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই এসবের বেশিরভাগ নিজেদের উদরস্থ করেছেন।

মাঝে করোনা কিছুটা কমলেও ভাইরাসটির ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ। এই সংখ্যা যে আরও বাড়তে পারে তা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি।

মহামারির অনেকটা পথ এসে সরকার অবশেষে কঠোর লকডাউনের বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যান্যবারের লকডাউনের চেয়ে এবারের লকডাউন দেশজুড়ে কিছুটা হলেও বেশি কার্যকর হচ্ছে। এটা কিছুদিন হলেও চলমান থাকা উচিত। প্রয়োজনভেদে আরও কঠোরও হওয়া উচিত।

লকডাউনে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন সংবাদে দেখছি কারো ঘরে আহার নেই। কেউ অনাহারে রয়েছেন। তাদের জন্য আপনি বিনা পয়সায় একটু সহযোগিতা করতে পারেন। তা হলো সরকারের জরুরি নম্বর ৩৩৩ এ ফোন করে বিস্তারিত ঠিকানা দিয়ে তার অবস্থার কথা তুলে ধরতে পারেন। এতে আপনার কোনো টাকা খরচ না হলেও অসহায়ের ঘরে খাবার পৌঁছে যাবে।

সরকার সরকারের সিদ্ধান্ত নিক। আপনি আপনার কাজটি করুন। আর যদি লকডাউন মানতে গিয়ে অভাবে পড়েন, না খেয়ে থাকতে হয় তাহলে সরকারই খাবার দেবে। এর জন্য ফ্রিতে ফোন করুন ৩৩৩ নম্বরে। খাবার যদি ঘরে বসে পান তাহলে তো খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথা কারোই অজানা নয়। সাধারণ সময়েই আমজনতা চিকিৎসা নিতে গেলে নানা রকম ঝামেলায় পড়েন। সেখানে এখনকার এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে যদি আপনাকে হাসপাতালে যেতে হয় তাহলে কতটুকু চিকিৎসা পাবেন তা বলা বাহুল্য। নিজের বাঁচা নিজেই বাঁচতে শিখুন। নিজের জন্য হলেও সচেতন হোন।

করোনার গণ-টিকাদান যখন প্রথমবার শুরু হয়েছিল তখন দেখেছি সাধারণ মানুষের মাঝে কী অনীহা। ফোন করেও তাদেরকে টিকা দেয়ানো সম্ভব হয়নি। আমার কাকা ইকলাস হোসেন (সিএইচসিপি) সেসময় জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে প্রতিদিন যে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককে টিকা দেয়ার নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে তাই পূরণ করা যাচ্ছে না। লোকদের বললে তারা যথাসম্ভব এড়িয়ে যাচ্ছেন। দয়া করে আবার গণ-টিকাদান শুরু হলে নিজে টিকা দিন। অন্যকেও বলুন।

শুধু সরকারের দোষ খুঁজিয়েন না নিজের দোষও খুঁজুন। সরকার প্রশাসনকে গালি দিয়ে নিয়ম না মেনে যা খুশি তাই করে বেড়ালে ভাইরাস আপনার থেকে দূরে থাকবে না। বরং নিজে কীভাবে নিরাপদ থাকবেন সেই চিন্তা করুন এবং সরকার যেহেতু ঘরে বসে থাকতে বলেছে ঘরে বসে থাকুন। বিপদে পড়লে সরকারকে বলুন সরকার সেই ব্যবস্থা খোলা রেখেছে।

সমাজের বা রাষ্ট্রের জন্য আপনার কিছু করতে মন না চাইলে না করুন কিন্তু অন্যের ক্ষতিটুকু করা থেকে বিরত থাকুন। তাহলে এই ভীতিকর অবস্থা থেকে নিস্তার পাবেন আপনিও, নিস্তার পাবে সবাই।

লেখক: সাংবাদিক