আমার মুক্তি আলোয় আলোয়…

প্রভাষ আমিন, বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৩:৫৫ | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৩:১৫

২৬ বছর আগের সেদিনটি ছিল বর্ষণমুখর। কুমিল্লা থেকে মুক্তি শিকদারকে তুলে আনার নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংবাদিক আমিনুর রশীদ। সাথে ছিলেন সস্ত্রীক ফজলুল বারী (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক), মোয়াজ্জেম হোসেন (বিবিসি)।

আগের দিন ঢাকা থেকে কুমিল্লা গিয়ে আমরা উঠেছিলাম বন্ধু কাশেমের লালমাইয়ের বাসায়। পরদিন কুমিল্লা শহর থেকে মুক্তিকে এনে তোলা হয় ইস্কাটনে বারী ভাইয়ের বাসায়। সেখান থেকে মগবাজার কাজী অফিস। সেখানে যুক্ত হন সস্ত্রীক মাসুদ কামাল, সস্ত্রীক আহমেদ দীপু। জরুরি অ্যাসাইনমেন্ট ছুটে এসে ছবি তোলেন ইয়াসিন কবির জয়। রাতে মাসুদ কামালের মিরপুরের বাসায় যুক্ত হন জনকণ্ঠের সহকর্মীদের অনেকেই। সে বাসায় ৭ দিনের আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন। তারপর অনেক গল্প, অনেক কান্না, অনেক হাসির ২৬ বছর। আমাদের যৌথ জীবনে সুপার গ্লু হয়ে এসেছে প্রসূন আমিন। তবে আমার পরিণতি দেখে বেচারা জীবনে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিয়ের ১৪ বছর পূর্তির দিনে এক ভদ্রলোক খুব মন খারাপ করে বসেছিলেন। বিয়ের আগে প্রেম করার সময় তার দাপুটে শ্বশুর নাকি হুমকি দিয়েছিলেন, ‘আমার মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করলে এমন মামলা দেব, যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে।‘ তার আফসোস, শ্বশুর মশাই যদি তার হুমকি বাস্তবায়ন করতেন, তাহলে আজ তিনি মুক্তি পেয়ে যেতেন।

পুরুষদের কাছে বিবাহিত জীবনকে কারাগারের মত লাগে। পুরুষ মানুষ নাকি- দুই প্রকার জীবিত আর বিবাহিত। আর সব পুরুষদের মত আমারও বিবাহিত জীবনকে কারাগার মনে হয়। নিজেকে মৃত ও পরাধীন মনে হয়। আর মুক্তির সংসারে আরো বেশি করে। মুক্তির হাজারটা সমস্যা। রাগী, বদমেজাজী, একরোখা, অবুঝ, জেদী, কর্তৃত্বপরায়ণ, যুক্তিহীন। সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তার কথার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। পান থেকে চুন খসার উপক্রম হলেই হুঙ্কার। আমার আর প্রসূনের জীবন তামা তামা। আমি বলি আমাদের পরিবার হলো, বাংলাদেশের মতো। এখানে উন্নয়ন আছে গণতন্ত্র নেই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। মুক্তির সংসারে সবকিছু গোছানো, সব সুবিধা হাজির। কিন্তু মুখ বন্ধ।

এতকিছুর পরও গত ২৬ বছর ধরে আমি মুক্তির সংসারের অতিথি, লটকে আছি তার গলায়। যতই বকা দিক, গালি দিক; তার পিছু পিছুই আছি। কারণ মুক্তির ভালোবাসার অসীম ক্ষমতা। হাজারটা বদনামওয়ালা চেনা মুক্তির আড়ালে আরেকটা মুক্তি আছে। সবাই তার দেখা পায় না। মুক্তি হলো পাথুরে পাহারের নিচে লুকিয়ে বয়ে যাওয়া ফল্গুধারা বা নারকেলের মতো। নারকেলের শক্ত খোলস দেখে অনেকে ভয়ে পালিয়ে যায়, বা পাথর খুড়তে খুড়তে ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়। কিন্তু একটু কষ্ট করে খুড়তে পারলেই পাওয়া যায় সুশীতল জলধারা বা নারকেলের সুমিষ্ট পানি। এটা জানে বলেই মামনি তার লাইফ অতিষ্ঠ করে ফেলার পরও প্রসূন মুক্তিরই ন্যাওটা। মুক্তি যেভাবে সংসার আগলে রাখে এটা অবিশ্বাস্য। ভালোবাসার জন্য সে দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাঁধতে পারে অনায়াসে।

এই ২৬ বছরে আমরা জীবনটা আমাদের মত করে যাপন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের দুজনের কেউই খুব হিসেবি নই। তবে বেহিসেবি জীবনটাও ভালো কেটেছে। গানে-গল্পে-বেড়ানোয়-হুল্লোড়ে কাটিয়ে দিয়েছি জীবনের অনেকটা পথ। দুজনেই ৫০ পেরিয়েও আমাদের সবকিছুতেই দারুণ কৌতূহল, আনন্দ খুঁজে নেই সব উপলক্ষ্যেই।

আমার স্বপ্ন ছিল শেষ জীবনটা মাটির কাছাকাছি থাকব। তাই একটু শহরতলীতে বাড়ি ভাড়া নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুক্তির স্বপ্ন ছিল একটা চকচকে নতুন বাসা। নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে মুক্তির স্বপ্নপূরণে গত কয়েকমাস অনেক বাসা খুঁজেছি। শেষ পর্যন্ত পেয়েছিও মুক্তির মনের মতো বাসা। একদম চকচকে নতুন বাসা। নিজের বাসা নিজের মতো করে সাজানোর স্বপ্ন হয়তো তার পূরণ হবে না, তবু ২৭তম বিয়েবার্ষিকীতে নতুন বাসাই তার জন্য উপহার।

মুক্তির ভালোবাসার অত্যাচারে আমরা পিষ্ট। তবু শুধু তাকেই ভালোবাসি। মুক্তির বন্ধনেই আমার মুক্তি। শুভ বিয়েবার্ষিকী প্রিয় মুক্তি শিকদার।

* কদিন আগে কপিল শর্মা শো'তে অভিষেক বচ্চন সুখী দাম্পত্য জীবনের গোপন সূত্র হিসেবে, যাই ঘটুক সবার আগে সরি বলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামীদের। অভিষেক বিয়ে করেছেন আমার ১১ বছর পর। আমি তো বলিনি, তিনি এই সূত্রটি কীভাবে জানলেন? যেভাবেই জানুন, সূত্রটি কিন্তু কার্যকর এবং চিরন্তন।

লেখক: বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :