মাথার ওপর মস্ত আকাশ ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’
দিব্যি বদলে যাচ্ছে জনে জনতার মফস্বল শহর। কেউ কারও খোঁজ জানে না। পরম নিধির গান শোনায় না। নুনের বদলে মরিচ দেয় না ধার। এ বাড়ি সে বাড়ি কেউ কারও নেয় না খবর। শীতের বহু আগে ঘন কুয়াশায় ছেয়েছে অন্ধকার।
কারেন্টের খাম্বাগুলো ভারী হয়েছে পোস্টার আবরণে। পরম্পরা লিফলেট ছেয়ে আছে দেয়ালে প্রকাশ্যে। টিউটর দিচ্ছি নিচ্ছি। বিসিএসে চান্স। নয়তো ব্যাংক জবের মারদাঙ্গা কোচিং। ফাস্টফুডের নয়া আউটলেট। বাসায় গিয়ে শেখানো হয় আরবি। চৌহদ্দি গলিয়ে কাজী অফিসের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লটকে আছে সারিবদ্ধ পোলে। বাড়ির সামনে, রাস্তায় কিংবা চেনা ফটকের বাঁ হাতে অচেনা পোস্টার। জমি মাপতে সরকারি আমিনের ঠিকুজি। আছে তালা চাবিওয়ালার ফোন নম্বর, স্লিম ফিটের ডাক্তার, এতিমখানায় চামড়া দান কিংবা মেস মেট একজন হিন্দু আবশ্যক। নচেত (ওয়াইফাই ফ্রি) ছোট ফ্যামিলির বাসা।
বাদামি আলোর নিচে জনতার খাম্বায় জনবিজ্ঞাপন। মস্ত ঢাকা থেকে মফস্বল অবধি যাপিত জীবনের কারবার এই তো!
অথচ কোথাও গান নেই, সুর নেই, লয় নেই। আছে শুধু প্রলয়। নেই কবিতার আহ্বান। আবৃত্তিশিল্পীরাও যাচেন না। সেই কবে ওস্তাদ জাকির হোসেনের শিষ্য এসেছিলেন শিল্পকলায়। অতঃপর খাঁ খাঁ তানপুরাটির তার ছিঁড়েছে। ধুলোর আস্তরণ আর সব ইন্সট্রুমেন্টে। তারের অমেলবন্ধনে উধাও সংস্কৃতি।
এসব জেনেবুঝেই সম্প্রীতি বাংলাদেশের অভ্যুদয়। চারপাশের অথৈ শূন্যতা ঠাহর করেছিল সম্প্রীতি। ৭ জুলাই তার চার বছরে পা। জন্মের পর সম্প্রীতির যখন কথা বলার সময় তখন করোনা হামলে পড়ল। তবু বাঁধ ভাঙা প্রত্যয় ছিল। কোভিড উতরাতে অনলাইন প্রচার ছিল তুঙ্গে। প্রক্রিয়াটি এখনও চলমান। অন্ধকার কাটলে দলবল নিয়ে মাঠে নামবেন সম্প্রীতির আহ্বায়ক নাট্যজন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব সুচিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনকের ত্যাগ, প্রত্যয়দীপ্ত আদর্শ নিয়ে সম্প্রীতি চলবে মাঠে তেপান্তরে। সংগঠকদের চেতনায় অবিরাম বাজবে বাঙালিত্বের দামামা। উন্নয়ন, উদ্ভাসন আর প্রজ্বলিত শিখা ছড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু হবে দশ দিক। আশা জাগানিয়া ‘সম্প্রীতি’ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে জনতায়-জনজীবনে পথ না হারানোর মন্ত্র পৌঁছে দেবে। সাম্যের গান গাইতে বাঙালির বুকে বাজবে সম্প্রীতির ঢোল। যেমনি করে গত সংসদ নির্বাচনে জনসচেতনতা গড়তে জেলা-উপজেলায় গিয়েছিল সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
জাতীয় আহ্বায়ক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আলী হাবিবের মতে, সম্প্রীতি বাংলাদেশ বাঙালির যূথবদ্ধ জীবনকে তুলে ধরে। শিল্প-সংস্কৃতি যখন পথ হারানোর শঙ্কায় তখনই ঐক্যের আহ্বান। করোনা মহামারিতে আমরা তার প্রমাণ দিয়েছি। এই অন্ধকার দূর হলে মস্ত এক আকাশ বাঙালিকে আমরা উপহার দিতে চাই।
লেখক: ড. অখিল পোদ্দার, হেড অব ইনপুট, একুশে টেলিভিশন
ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/এসকেএস