নারায়ণগঞ্জের আগুন: ভোলার নিখোঁজ ৭ শ্রমিকের পরিবারে আহাজারি

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২১, ১৮:৩১

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ সাত শ্রমিকের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। জীবিত না হলে অন্তত লাশটি একবার ছুঁয়ে দেখতে চায় পরিবারের সদস্যরা।

শনিবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিখোঁজ শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি পরিবারই শোকে স্তব্ধ। কোনো কথাই বলতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। আগুনের সময় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৮ জন শ্রমিক কারখানার চারতলায় কাজ করছিলেন। এ সময় কারখানার ছাদে উঠে ১১ জন প্রাণ বাঁচাতে পারলেও সাতজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা কেউ জানে না।

উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মাতাব্বর। নিজের একমাত্র ছেলে নোমান (২২) চার বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। ছেলের মাসে মাসে পাঠানো টাকায় তার ওষুধ ও সংসারের খরচ চলতো। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন কিছুই বলতে পারছেন না তিনি। কেউ গেলে শুধু তার দিকেই চেয়ে থাকেন।

জীবিত না হলেও অন্তত মৃত ছেলের মুখটি একটিবারের জন্য দেখতে চান বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান। একই অবস্থা নোমানের মা ফিরোজা বেগমের। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাদের দুই মেয়ে, এক ছেলে। এর আগেও তিনটি ছেলে বড় হয়ে মারা যায়। সর্বশেষ এই একটি ছেলেকে অনেক কষ্ট করে লালনপালন করে বড় করেছেন। আশা ছিল শেষ বয়সে এই ছেলেই তাদের দেখভাল করবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না তাদের।

আগুনের চরফ্যাশন উপজেলার আরো নিখোঁজ রয়েছে- আব্দুল্লাহপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের মাঝি বাড়ির দিনমজুর ফজলুর রহমানের ছেলে মো. হাসনাইন (১১), একই বাড়ির রিকশাচালক মো. কবিরের ছেলে মো. রাকিব (২২), জিন্নাগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দাসকান্দি এলাকার আবু তাহেরের মেয়ের জামাই মো. শাকিল (২৩), চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তাজউদ্দিনের ছেলে মো. রাকিব, দক্ষিণ আইচা চর মানিকা ইউনিয়নের মো. ফখরুল ইসলামের ছেলে শামিম, আছলামপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকার মো. গোলাম আলীর ছেলে মো. মহিউদ্দিন।

আগুনে একই উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল রাঢ়ীর ছেলে মো. ফয়সাল (১৯), মো. রুহুল আমিন পাটওয়ারীর ছেলে মো. রাসেল (১৮), আব্দুল গনির ছেলে মো. ইউছুফ, মো. লিটনের ছেলে মো. আল আমিন, আবু জাহেরের ছেলে মো. মোতালেবসহ সাতজন আহত হয়।

এওয়াজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বলেন, গত রোজার ঈদের ৮-১০ দিন পর স্থানীয় মোতালেব সরদার এওয়াজপুরসহ পাশের এলাকার ১৮ জন শ্রমিক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কারখানায় সেমাই তৈরির কাজ করতে যায়। মোতালেবের নেতৃত্বেই এরা সেখানে কাজ করতেন। আগুনের দিন মোতালেব কারখানার বাইরে চা খেতে গেলে কারখানার ভিতরে আগুন লাগে। এতে ১৮ জনের মধ্যে ১১ জনকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মাধ্যমে উদ্ধার হলেও বাকি সাতজনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে আগুনে উদ্ধার হওয়া ৫২টি পোড়া লাশের মধ্যে তাদের লাশ থাকতে পারে।

এওয়াজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকন বলেন, তার ইউনিয়নের একজন নিখোঁজ, সাতজন আহত হয়েছেন। এরা প্রত্যেকে অসহায়। তাদের সাহায্য করা দরকার।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ, নিহতের পরিবার ও আহতদের পরিবারকে অর্থসহায়তা দেবে। চরফ্যাশন থেকে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জিআর, বয়ষ্ক ভাতা দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :