রূপগঞ্জ ট্রাজেডি: মহিউদ্দিনের লাশ শনাক্ত নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবার

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২১, ২৩:৩৪

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওমরপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মহিউদ্দিন (২৫)। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। লেখাপড়া তেমন করতে না পারায় কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। কথা ছিল দুয়েকদিনের মধ্যে ঈদুল আযহা উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবেন।

লকডাউনে বাড়িতে যেতে কয়েকজন শ্রমিক মিলে একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাড়াও করেছেন। কিন্তু তাদের আর বাড়িতে এসে ঈদ করা হলো না। কারখানার ভয়ঙ্কর আগুনে তাদের সবার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। আর কোনো দিন বাড়িতে এসে ঈদ করা হবে না মহিউদ্দিনের। শেষবারের মতো এক নজর দেখে মাটি দিতে চান তার স্বজনরা। কিন্তু তাও সম্ভব হবে না। কারণ, রূপগঞ্জের কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহতদের সবার মরদেহই পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। কোনটি কার লাশ তাও চেনার উপায় নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিখোঁজদের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্তের জন্য তাদের বাবা-মাকে ঢাকায় যেতে বলেছে। কিন্তু মহিউদ্দিনের বাবা গোলাম হোসেন মাঝি তিন বছর আগে মারা গেছেন। ছোট ছেলের মৃত্যুর খবরে মা হজন নেছাও শয্যাশায়ী। ঢাকায় যাওয়ার মতো কোনো অবস্থাই নেই তার। এ নিয়ে চিন্তিত মহিউদ্দিনের পরিবার।

মহিউদ্দিনের বড় ভাই মো. রফিক মাঝি জানান, কারখানায় আগুন লাগার আগের দিন ফোনে মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় তার। বাড়িতে কবে আসবে, কিভাবে আসবে সব কথাই হয়েছে। পরের দিনই শুনেন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর। ঢাকায় থাকা তার আরেক ভাই দ্রুত ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু ভাইয়ের কোনো খোঁজ পেলেন না।

রফিক মাঝি বলেন, আগুনের ঘটনায় বেঁচে থাকা মহিউদ্দিনের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন মহিউদ্দিনসহ ১৮ জন কর্মী ভবনের চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন। আগুনের খবরে তাদের সঙ্গী শ্রমিকদের মধ্যে কিছু নিচে নেমে যায়। কিছু ছাদে উঠে যায়। ছাদে ওঠা শ্রমিকরা প্রাণে বেঁচে ফিরলেও নিচে নেমে যাওয়া শ্রমিকরা চার তলার গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেনি। এতে তিনি কারখানার মালিকদের দোষারোপ করেন। কারণ নিচে নেমে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে মহিউদ্দিনও ছিলেন। গেটটি খোলা থাকলে তার ভাইসহ অন্য শ্রমিকদের এভাবে আগুনে পুড়ে কয়লা হতে হতো না বলে আক্ষেপ করেন রফিক।

রফিক মাঝি বলেন, ভাইকে তো আর পাবো না, এটা নিশ্চিত। কিন্তু ভাইয়ের লাশ পাওয়া নিয়েও এখন অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, বাবা বেঁচে নেই, মাও অসুস্থ। কিভাবে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত হবে। ভাইয়ের লাশ খুঁজে পেলে অন্তত এক মুঠো মাটি দিয়ে মনকে বুঝ মানাতে চান রফিক।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :