রূপগঞ্জ ট্রাজেডি

গ্রামের শিশুদের এনে হাসেম ফুডে কাজে দিতেন দুই ঠিকাদার

জাহাঙ্গীর মাহমুদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
| আপডেট : ১১ জুলাই ২০২১, ১২:৫২ | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২১, ১২:০৬

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকার সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের বেশিরভাগই শিশু। বড়দের তুলনায় অর্ধেক বেতনে কাজ করানো যেত বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ শিশুদেরই বেশি নিয়োগ দিত। আর এইসব শিশু শ্রমিকদের দেশের ভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসতো প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদারেরা।

গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানাটিতে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি যেমন সামনে আসে তেমনি আলোচনায় আসে ওই শিশুদের ঢাকায় এনে কাজ দেওয়ার নেপথ্য ঠিকাদারদের নামও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানায় শিশু শ্রমিক সাপ্লাই করতেন দুই ঠিকাদার মোতালিব ও সিরাজুল ইসলাম। ভোলা ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসেম ফুডসহ বিভিন্ন কারখানায় শিশু শ্রমিক সাপ্লাই দিতেন তারা।

হাসেম ফুডের কারখানায় রিপন নামে আরেক ঠিকাদারের শিশু সরবরাহ করতো তারা। সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করানো হতো শিশুদের। কারখানা যে বেতন দিত তার একটা অংশও রাখতেন এই ঠিকাদারেরা।

শ্রমিকদের ভাষ্য, এই তিন ঠিকাদারের প্রধান টার্গেট ছিল নিম্নবিত্ত ও অসহায় পরিবারের লোকজন। কারখানাতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিককে কমপক্ষে ১০-১২ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। কিন্তু একজন শিশু শ্রমিককে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন দিলেই চলে।

অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ১২ বছর বয়সী শান্তামনির মা শিমু আক্তার বলেন, তার মেয়ে দুর্ঘটনার দুইদিন আগে ঠিকাদার রিপনের অধীনে অস্থায়ী ভিত্তিতে হাসেম ফুডের ওই ভবনের চারতলায় কাজ নেয়। ওখানে সে নসিলা উৎপাদন করতো। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যাওয়ার পর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ইসরাত জাহান তুলির বোন ঝুমা বলেন, তার বোন ইসরাত জাহানও (১৬) ঠিকাদার রিপনের অধীনে কাজ করত। মোতালিব ও সিরাজের মাধ্যমে গত দুই মাস আগে এই কারখানায় কাজে যোগ দেয় তার বোন।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের দিনমজুর ফজলুর রহমানের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে মো. হাসনাইনকে কারখানাটির কাজে লাগিয়েছিলন মোতালেব। ফজলুর রহমানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ছোট্ট ছেলেটিকে টার্গেট করেন মোতালেব। গত রোজার ঈদের পর নিয়ে আসেন কারখানায়। আগুন লাগার পর থেকে নিখোঁজ হাসনাইন।

মোতালেব, সিরাজ কিংবা রিপন আরো অনেক শিশুকেই সেখানে কাজে আনেন। ২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের সার্বিক শ্রম এবং ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অথচ খোদ শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে দেশের ১৩ লাখের বেশি শিশু।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :