স্বপ্নের ঠিকানা পেয়ে গৃহহীনদের চোখে-মুখে আনন্দ

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২১, ২০:৪৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা। কয়েকমাস আগেও যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিলেন তারা কল্পনাও করেননি যে মুজিববর্ষে পাবেন জমিসহ বাড়ি।

এরকমই একজন স্বামী পরিত্যক্তা ফাতেমা বেগম। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে আবেগাপ্লুত তিনি। ফাতেমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন স্বামী আমাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করে খোঁজ খবর রাখে না। বাপেরও জমিজমা নাই। পরের লাথিগুতা খেয়ে কোনো মতো বেঁচে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর আমারে এট্টা ঘর দিছে, দুই শতক জমি দিছে, মাথা গুজার একটা ঠাঁই পেয়েছি, আমি ভীষণ খুশি, আমি জীবনেও ভাবিনাই আমার একটা ঘর হবে।’ এসব বলতে বলতে ফাতেমার দুচোখ বেয়ে নেমে আসে আনন্দের অশ্রু।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান অনুমোদিত ডিজাইন প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের আরাজী শিবানন্দপুর গেল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ফাতেমা।

আরেকজন উপকারভোগী খুশি বেগম। তিনিও স্বামী পরিত্যক্তা। এলাকার বিত্তবানদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কখনো-বা কাঁথা সেলাই করে কোনো মতে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। খুশি বেগমের না ছিল জমি, না ছিল ঘর। পরের ঘরে মানুষের দয়া-দক্ষিণায় যদিও একটু ঠাঁই মিলেছে, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি বেশি দিন।

খুশি বেগম বলেন, ‘আমি জীবনে কল্পনাও করিনি আমার নিজের একটা ঘর হবে, হবে একটি ঠিকানা। সমাজের আর ১০ জনের মতো বলতে পারবো ‘আমার বাড়ি’, যা স্বপ্নেও কোনদিন ভাবিনি। সেটি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।’

ঘর পেয়ে খুশি জামেলা বেগমও। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল, যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচর-নির্যাতনে সংসার করতে পারিনি। বাপের বাড়িও জায়গা হয়নি, অবশেষে এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নিজের একটা বাড়ি হয়েছে।’

একটি জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জুট মিলের অন্য নারী শ্রমিকদের সঙ্গে তার বসবাস। জুট মিলের নিকটবর্তী শিবানন্দপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে গৃহহীন অন্যদের মতই একটি ঘর পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন দুই শতক জমি। শেখ হাসিনার জন্য তার একটি আশ্রয় হয়েছে। এতে উচ্ছাসিত জামেলা বেগম।

সৈয়দপুরে প্রথম ধাপের এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি ঘর। মাঝা-মাঝিতে নিচু জমি হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি জমতে পারে তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন।

গুনবহা ইউনিয়নের ধোপাপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মোট ২০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানেও বৃষ্টিতে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা আশ্রয়ন প্রকল্প ঘেঁষা একটি জলাশয় থাকায় ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণ করা হয়েছে গাইড ওয়াল, যাতে বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে মাটি ধুয়ে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি না করে। একই চিত্র দেখা গেছে বাগডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পেও।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বোয়ালমারীতে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৩১৫টি সেমিপাকা ঘর, যা ইতোমধ্যেই সুবিধাভোগী গৃহহীনদের দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গৃহগুলো নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান অনুমোদিত ডিজাইন প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে। আমরা কাজগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছি। বৈরী আবহাওয়া, অতি বৃষ্টি, করোনাকালীন প্রতিকূল অবস্থায় শ্রমিক সংকট থাকায় গৃহগুলো নির্মাণে একটু বেগ পেতে হয়েছে। কোথাও সমস্যা সৃষ্টি হলে তড়িৎ গতিতে সেসব সমস্যা সমাধান করে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করেই নির্মাণ করা হয়েছে এসব ঘর।’

ইউএনও বলেন, ‘কয়েকটি প্রকল্পে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হতে পারে, তাই নির্মাণ করা হয়েছে জলনিষ্কাশন ড্রেন ও গাইড ওয়াল। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ সম্পন্ন করে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি, বরং আগামী দিনগুলোতে এই পরিবারগুলোর পাশে থাকতে বোয়ালমারী উপজেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :