ঈদের আগে প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীরা

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২১, ১০:৫৩ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১, ১১:৩০

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস

করোনা মোকাবেলায় ১ থেকে ১৪ জুলাই সীমিত আকারে চালু আছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১টি ও হাইকোর্ট বিভাগে ৩টি বেঞ্চ চালু রেখে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপর ১৮ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে অবকাশকালীন ছুটি। এ সময় চলবে হাইকোর্টের ৪টি বেঞ্চ। তাও আবার সরকারি ছুটিতে কোর্টগুলো থাকবে একদম বন্ধ। এমন সিদ্ধান্ত মানতে কষ্ট হচ্ছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের। 

সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ এক মাস দেশের সর্বোচ্চ আদালত সীমিত থাকায় বিপাকে আইনজীবীরা। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। ইতোমধ্যে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের এমন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোর্টের বেঞ্চ বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রধান বিচারপতি তার আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেন, দেশের অবস্থা ভালো না। সংক্রমণের হার বেশি, তাই সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বাড়ানো ঠিক হবে না। 

এদিকে আগামী ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করবে। ঈদকে কেন্দ্র করে খরচ বাড়বে, পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরা জামিনে বের হলে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন।  

প্রথা ও বাস্তবতার সমন্বয় রেখে পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঈদের আগে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে কিছু অতীব জরুরি মামলা শুনানির জন্য বেঞ্চ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বিচারপ্রার্থীরা বিচারের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি আইনজীবীদের হতাশা কাটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবাই তাই তাকিয়ে আছেন প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের দিকে। 

বিচারপ্রার্থী বেলাল হোসেন বলেন, গত রোজার ঈদের আগে আমার ভাইয়ের জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করেছি। মাস গেল দুইটি, এখনও মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় আছে। করোনার কারণে গত ৩০ জুন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মনটা খুবই খারাপ। কোর্ট খোলা থাকলে ভাইয়ের জামিন হতো। সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারতাম। 

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ঢাকাটাইমসকে বলেন, শুধু ঈদকে কেন্দ্র করে নয়, আমি সারা বছর ভার্চুয়ালি সব কোর্ট খোলা রাখার দাবি জানিয়ে আসছি। এর আগে করোনার কারণে সীমিত ছিল, এখন আবার ভ্যাকেশন (অবকাশকালীন ছুটি)। ভ্যাকেশন বাতিল করতে হবে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি। 

এদিকে মামলা না থাকায় আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছেন আইনজীবীরা। যদিও গত বছরের ন্যায় এবারও বিনা সুদে অল্প কিছু ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার। কিন্তু সেই ঋণের পরিমাণ মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এটি এক মাসের খরচ। বাকি দিন চলবে কিভাবে? 

জানতে চাইলে সংগঠনটির সহসভাপতি শফিক উল্যাহ বলেন, আইনজীবীদের আর্থিক দৈন্য অবশ্যই অনুভব করছি। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা কিছু লোন দিয়েছি। করোনার মধ্যে কিছু অফিস ও কলকারখানা খোলা আছে। হাইকোর্টে মাত্র তিনটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ চলছে। আরও কয়েকটি কোর্ট বাড়ানো যেতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির বলেন, আমি মনে করি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও সীমিত পরিসরে আদালত চালু আছে। সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় আদালত খোলা রাখা দরকার। জরুরি বিষয়সমূহ বিশেষ করে জামিন শুনানি করার জন্য কয়েকটি বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন।
 
দীর্ঘ লকডাউনে আইনজীবী ও মক্কেলের মধ্যে প্রতিনিয়ত  ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে  পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। অন্যদিকে মক্কেল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।  আইনজীবীও  তার  সেরেস্তা নিয়ে চমর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন।

ভুক্তভোগী আইনজীবী মো. মাসুদ রানা বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে সংখ্যায় বৃহৎ আইনজীবী সমাজ। দেশে ৬৭ হাজার আইনজীবী আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভাড়া বাসায় থাকেন। বার কাউন্সিলসহ বার এসোসিয়েশনের চাঁদা পরিশোধ করার সঙ্গে জীবন যাপনের ব্যয় মিটানোর একমাত্র আয়ের উৎস হলো বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া ফি।

করোনা পরিস্থিতিতে অন্য সব পেশার মানুষদের তুলনায় আইনজীবীরা চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। এদিকে অনেকেই জামিন যোগ্য অপরাধে এমনকি গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও জামিন পাওয়ার মতো কারণ/আইনি সুযোগ থাকার পরও আদালত বন্ধ থাকায় জেল খাটছেন। কোর্ট বন্ধ রেখে মানুষ যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, আইজীবীরাও কর্মহীন থাকছেন।

এর আগে গত ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের এক প্রজ্ঞাপনে আদালতগুলো সীমিত পরিসরে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তখন থেকে আপিল বিভাগে ১টি ও হাইকোর্টে ৩টি বেঞ্চ সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। যেখানে অন্য সময় খোলা থাকতো সুপ্রিম কোর্টের ৫৩টি বেঞ্চ। মাঝে মধ্যে এসব বেঞ্চের সংখ্যা কম বেশি হতো। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকছেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জেলা-মহানগরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এআইএম/কেআর)