ঋণখেলাপি আমান ফিডের শেয়ার দরে রমরমা, কারসাজি নয় তো?

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২১, ১৬:২৮ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২১, ১৪:৩৬

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি আমান ফিড লিমিটেড একটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। এবি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির সম্পদ নিলামে উঠানোর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ব্যাংকটি। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে নিলাম স্থগিত রাখার জন্য আবেদন করলে আদালত ঋণ পরিশোধের জন্য তিন মাসের সময় বেধে দিয়েছিল। কিন্তু কোম্পানিটি সে সময়েও ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। তবুও কোম্পানিটির শেয়ার দর রমরমা। ঋণখেলাপি কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে কি না সেই গুঞ্জন চলছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা ২৪.২০ টাকা। এক মাস আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪৮.১০ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭২.৩০ টাকা। খেলাপি ঋণ শোধ না করতে পারা কোম্পানিটি কবে নাগাদ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তারও কোনো ঠিক নেই। কোম্পানিটির উৎপাদনেও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবুও কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত বছরের চেয়ে এ বছর শেয়ার প্রতি আয় কমেছে। কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ না করতে পারা, আয় কমে যাওয়া এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ার পরও কোম্পানিটির শেয়ার দর কেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) নির্মল চন্দ্র ঢাকাটাইমসকে বলেন, করোনাকালে বেশিরভাগ কোম্পানি আয় করতে পারেনি। সে তুলনায় আমান ফিডের ব্যবসা একেবারে খারাপ না। আর আমান ফিড নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের ভালো কিছু দিয়ে আসছে।

ঋণখেলাপির বিষয়ে নির্মল চন্দ্র বলেন, আমাদের এবি ব্যাংকের সাথে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে নতুন করে আবারও সময় নেয়ার কথা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি। বাকি অর্থ পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে সময় নেয়ার চেষ্টা করছি।

তবে কত সময়ের জন্য ব্যাংক বরাবর আবেদন করা হচ্ছে তা তিনি এখনই বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করায় ব্যাংকের সঙ্গে এখন আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অগ্রগতি পাচ্ছে। শেয়ার দর বৃদ্ধির কোনো সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে ডিএসই বরাবর জানানো হয়েছে। তবে আমাদের ব্যবসা যে খারাপ যাচ্ছে তাও কিন্তু নয়।

কোম্পানিটির শেয়ার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে দর বেড়েছে ৪৪.৪০ টাকা বা ১৬০ শতাংশ। তিন মাস আগে তাদের শেয়ার দর ছিল ২৭.৮০ টাকা। যা বেড়ে বর্তমানে অবস্থান করছে ৭২.২০ টাকায়।

২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ এবং ২.৫০ শতাংশ বোনাস। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২.৭১ টাকা।

এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব মনিরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের কাছে সময় চেয়েছি। প্রথম কিস্তি পরিশোধের ফলে ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নতুন করে যে সময় চেয়েছি তা এখনও পাইনি। কিস্তি পরিশোধের নতুন সময় পেলে আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম জানিয়ে দেব।

এর আগে আমান ফিড লিমিটেডকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদালত। এই সময়ের মধ্যে প্রতি মাসে কিস্তি হিসেবে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। বকেয়া ঋণের কারণে জমি ও কারখানা নিলামে তোলার বিরুদ্ধে আমান ফিডের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি নিলাম স্থগিত রাখার কথা বলেছে হাইকোর্ট।

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যদি আমান ফিড প্রথম কিস্তি অক্টোবর মাসের মধ্যে পরিশোধ না করে তবে এবি ব্যাংক ফের আমান ফিডের জমি ও কারখানা নিলামে তুলতে পারবে। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে জানুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য আবার নতুন করে সময় চেয়ে ব্যাংক বরাবর আবেদন করেছে।

ঋণখেলাপির বিষয়ে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিফ আফজালকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

গত বছরের ৭ আগস্ট এবি ব্যাংক লিমিটেড আমান ফিডের জমি নিলামে তোলার বিষয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আমান ফিডের কাছে গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঋণ ও সুদসহ মোট ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওনা এবি ব্যাংকের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটির সিরাজগঞ্জে কারখানা, জমি ও গাজীপুরের জমির মূল্যমান আসে ৭০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিবিধ খাতের কোম্পানি আমান ফিড লিমিটেড ২০১৫ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে ২৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৬ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করা হয় বিনিয়োগকারীদের কাছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এসআই/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :