সাক্ষাৎকারে সিরাজুল ইসলাম রানা

ক্যাশ অন ডেলিভারি ও প্রি-অর্ডার দুটোই গুরুত্ব দিচ্ছে ধামাকাশপিং

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২১, ১১:১১ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১, ১১:২৭

অনলাইন ডেস্ক

দেশে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-কমার্সে কেনাকাটা। ঘরে বসে অর্ডার করে ঘরেই পণ্য নিতে পারছেন ক্রেতারা। সম্প্রতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কিছু নির্দেশা জারি করেছে সরকার। তাতে অনলাইন কেনাকাটায় কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, কিংবা তারা এখন গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনে কী পদ্ধতি অবলম্বন করছে তা জানতে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে ধামাকাশপিংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সিরাজুল ইসলাম রানার সঙ্গে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ধামাকাশপিংয়ের সিওও জানান, তারা এখন ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং প্রি-অর্ডার দুটো মডেলকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান।

 

দেশে যেসব অনলাইন প্লাটফর্ম আছে তা থেকে ধামাকাশপিং কেন আলাদা?

সিরাজুল ইসলাম রানা: ধামাকাশপিং ডটকমের পথচলা গত বছরের শেষ দিকে। শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের একটা নতুনত্ব দেওয়া। সেটা অবশ্যই অন্যদের থেকে ভিন্ন। আমরা শুরু থেকেই গ্রাহককে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড়ে পণ্য কেনার সুযোগ দিয়ে এসেছি। সেই সঙ্গে প্রোডাক্ট স্টক করার পর সেটি নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকের হাতে পণ্য তুলে দিতে পেরেছি। এছাড়া আমরা চালু করেছি প্রাইমশপ। সেখান থেকে পণ্য অর্ডার করে সেদিনই নির্দিষ্ট স্টোর থেকে গ্রাহক পণ্য নিতে পারেন। আমরা শুরু থেকে মাসে অন্তত এক লাখ পণ্যের অর্ডার পেয়েছি এবং তা সঠিক সময়ে গ্রাহকদের হাতে তুলে দিয়েছি।  

 

ধামাকাশপিং থেকে কেনাকাটা করার জন্য ক্রেতাদের বাড়তি কী সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে?

সিরাজুল ইসলাম রানা: ধামাকাশপিং থেকে যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহক মূল্যছাড় সুবিধার পাশাপাশি সম্প্রতি সরকার নির্ধারিত সব ধরনের সেবাই পাচ্ছেন। ক্যাশ অন ডেলিভারির পাশাপাশি ১০ দিনে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি আমরা। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের ওয়্যারহাউসে পণ্য রেখে তারপর ক্যাম্পেইন ঘোষণা করছি। ফলে ঢাকার মধ্যে আমরা ৩-৫ দিন এবং সারা দেশে ৭-১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করতে পারছি। আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং ১০ শতাংশ পেমেন্ট করে প্রি-অর্ডার দুটো মডেলকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহক যেকোনো মডেলে পণ্য অর্ডার করতে পারছেন।

বাংলাদেশের ই-কমার্সগুলো ঘিরে এখনো গ্রাহকদের আস্থা পুরোপুরি তৈরি হয়নি বলে প্রচলিত আছে। সিরাজুল ইসলাম রানা: গ্রাহকের আস্থা তৈরি হয়নি- এ কথা বলা যাবে না। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিন্তু সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয়েছে ই-কমার্স থেকে। যদি আস্থার সংকট হতো তাহলে এত গ্রাহক ই-কমার্স থেকে পণ্য কিনতেন না। প্রতি মাসে আমাদের এখানে লাখ লাখ অর্ডার আসছে। আস্থা যদি না থাকত তাহলে তো এত অর্ডার আসার যুক্তি নেই।

 

বাংলাদেশের ই-কমার্সকে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন।

সিরাজুল ইসলাম রানা: বাংলাদেশে ই-কমার্স ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুধু ঢাকা নয় কম-বেশি ঢাকার বাইরে থেকেও মানুষ নিয়মিত অর্ডার করছেন। যদিও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই খাতে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য পৌঁছাতে কিছু দেরি হয়। সেটা কাটিয়ে ওঠা গেলে এই খাতটি অনেক বড় একটা খাত হিসেবে পরিচালনা করা আরও সহজ হবে। আমরা নিজেদের একটা সিস্টেম গড়ে তুলছি, যেখানে দেশের যেকোনো প্রান্তের ক্রেতারা অর্ডার করার এক-দুই দিনের মধ্যে তাদের পণ্য হাতে পান।

 

সম্প্রতি সাতটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে ধামাকাশপিংও আছে। এ নিয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

সিরাজুল ইসলাম রানা: বিষয়টি নিয়ে আমরা বিএফআইইউর সঙ্গে কাজ করছি। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছি। সরকারের নীতিগত যেকোনো সিন্ধান্তের পক্ষে আমরা আছি এবং থাকব।

 

ব্যাংক হিসাব তলব করায় আপনাদের লেনদেন, কেনাবেচা, পণ্য ডেলিভারিতে প্রভাব পড়েছে কি না?

সিরাজুল ইসলাম রানা: ব্যাংক হিসাব তলব করার সঙ্গে আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই।  আগের মতো গ্রাহক কেনাকাটা করছে এবং আমরা চেষ্টা করছি সঠিক সময়ে গ্রাহককে তার পণ্য পৌঁছে দিতে। আমরা আগের মতোই অপারেশন পরিচালনা করছি।

 

গ্রাহকদের বড় একটা অংশ কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডে ধামাকাশপিংয়ে কেনাকাটা বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে আপনাদের ই-কমার্সে গ্রাহকদের কেনাকাটায় কী ধরনের প্রভাব পড়েছে।

সিরাজুল ইসলাম রানা: সরকারের দেওয়া নতুন নির্দেশনা অনুসারে ই-কমার্সে কেনাকাটার একটি বড় অংশ এখন ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হবে। আমরা সম্প্রতি ক্যাশ অন ডেলিভারি সার্ভিস শুরু করেছি। ফলে গ্রাহকদের বেশির ভাগই এখন ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য কিনছেন। ক্রেডিট, ডেবিট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে গ্রাহক কেনাকাটা করতে পারছেন। কিছু ব্যাংক এখনো চালু করেনি। আশা করছি তারাও অচিরেই ফিরে আসবে।

ধামাকাশপিং বিশাল অঙ্কের ছাড়ে মোটরবাইক, এসি, ফ্রিজসহ নানান জিনিস বিক্রি করছে। এতটা ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে মুনাফা কীভাবে সম্ভব?

সিরাজুল ইসলাম রানা: আমরা মূলত বাল্ক অ্যামাউন্ট বা বড় পরিসরে পণ্য কিনে থাকি। আমরা বাজার মূল্যের চেয়ে অধিকাংশ পণ্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে সংগ্রহ করতে পারি। এ ছাড়া চলমান লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতে ফিজিক্যাল স্টোরে বেচাকেনা কমার পাশপাশি মানুষ ই-কমার্সনির্ভর হয়েছে। এতে আমাদের বিভিন্ন সেলার সহজেই তার পণ্য ধামাকার মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি করছেন।

 

আমাদের যে বিপণন বাজেট, তা থেকে আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে পণ্য কিনতে গ্রাহককে একটা ভর্তুকি দিয়ে থাকি আমরা। এতে আমাদের দ্রুত গ্রাহক তৈরি হয়। আমরা এভাবে ধীরে ধীরে নিজেদের ব্রেক ইভেনের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আর অফারও কমছে। আমরা পুরোপুরি ব্রেক ইভেনে চলে এলে মানুষ এমনিতেই ধামাকাশপিং থেকে পণ্য কিনবে, তখন আর এত অফারের প্রয়োজন হবে না।

 

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সিরাজুল ইসলাম রানা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এজেড/মোআ)