পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ভয়ংকর এক প্রতারকের গল্প
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদক ও এনবিআরের ভয় দেখিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ফাঁদে ফেলেন প্রতারক হারুন
কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কখনও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’ কিংবা শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এসব সরকারি দপ্তরের ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন হারুন অর রশিদ ওরফে বডিবিল্ডার্স হারুন নামে এক যুবক।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের তদন্তে তার ভয়াবহ প্রতারণার স্পর্শকাতর তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের লোহাগড়া এলাকার হারুন অর রশিদ ওরফে বডিবিল্ডার্স হারুনের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে অপরাধ ও প্রতারণার বেশকিছু লোমহর্ষক ঘটনা।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) মতিঝিল জোনের পরিদর্শক মো. তাজুল ইসলাম প্রতারক হারুনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে তিনি ওই প্রতারকের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলাসহ তিনটি মামলার বিষয় উল্লেখ করেন।
ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে (অভিযোগপত্র) বলা হয়, পূর্ণ তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বডি বিল্ডার্স হারুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। মতিঝিল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শহীদ জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান একটি শিল্প গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) হিসেবে কর্মরত। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করে হারুন ৯৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে অনল রায়হান পুলিশের কাছে লিখিত জবানবন্দিও দেন।
হারুন ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও পরিচালককে অপহরণ ও গুম-খুন করারও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বডি বিল্ডার্স হারুন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করেছিলেন।
এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক (নোমান গ্রুপ) মো. শহীদুল্লাহ চৌধুরী মতিঝিল থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেন। এরপর পুলিশ ঘটনার তদন্তকালে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেয় এবং হারুনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রিপন বারৈ নামে জনৈক আইনজীবীর স্বাক্ষর ব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুদক ও এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে লেখা আবেদনপত্র প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠিয়ে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠানো ওই আবেদনপত্রগুলো তদন্ত করতে গিয়ে আইনজীবী রিপন বারৈকে তার স্বাক্ষরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রিপন বারৈ পুলিশকে লিখিতভাবে জানান, ওই স্বাক্ষর বা স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রগুলো তার নয়। এ ধরনের আবেদনপত্র পাঠানোর জন্য তিনি ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্তও নন। অথচ হারুন ওই দরখাস্তগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে তার প্রতারণা ও অর্থ হাতানোর কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘হারুন অন্যের রূপ ধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে শিল্পগ্রুপটির ক্ষতিসাধন করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন।’
তদন্তের বরাত দিয়ে পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বডি বিল্ডার্স হারুন একজন চিহ্নিত প্রতারক, অবৈধ অস্ত্রধারী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর আক্রমণকারী ও ডাকাত দলের একজন সক্রিয় সদস্য।’
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্তকালে আমি প্রতারক হারুনের বিষয়ে যেসব তথ্য পাই তা আদালতে দাখিল করেছি। এ ধরনের প্রতারকের বিচারের বিষয়টি এখন আদালতের ওপর ন্যস্ত।’
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুলাই/এএ/এইচএফ)