খালে বাঁধ: অনাবাদির আশঙ্কায় ২ হাজার একর জমি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২১, ১৭:৩৬ | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০২১, ১৭:২৯

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এবারও অনাবাদি থাকতে পারে দুই হাজার একর ফসলি জমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর পাঁচজুনিয়া মৌজার ১ নম্বর সিটের ৭১ নম্বর জেল-এর সরকারি খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানায়, মাছ চাষের জন্য বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের দাবি, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও কয়েকজন প্রভাবশালী অসাধু লোকদের ব্যক্তিস্বার্থের কারণে দুই হাজার একর জমি গতবারের মতো এবারও অনাবাদি থাকবে।

তারা বলেন, গত বছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে সমাধান পাইনি। এবার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।

কৃষকরা জানান, চাষাবাদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য এ খালটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য খালটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হলে প্রায় দুই হাজার একর জমি বছরের অর্ধেক সময় ধরে পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে।

বিএনপি নেতা ও অবৈধ দখলবাজ প্রভাবশালীদের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বৈঠক করে কোনো সুরাহা করতে না পেরে অসহায় পরিবারগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

মো. আসাদুজ্জামান আলমগীর জানান, ২০-২৫ বছর ধরে এই জমি তিন ফসলি। খালের উপর বাঁধ দেয়ার কারণে এখন আর ফসল হয় না। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পিএনডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গত বছর প্রায় ২০০ লোকের উপস্থিতিতে সমাধানের আশ্বস্ত করলেও কোনো সমাধান হয়নি।

কৃষক জাহাঙ্গীর আলম মৃধা ও জসিম মৃধাসহ একাধিক ভুক্তোভোগীরা বলেন, সরকারি খাল সবার ব্যবহারের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। সেই খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় আমরা চাষাবাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছি। অতি দ্রুত এ বাঁধ ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে স্ত্রী-সন্তানসহ আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গত বছর আমি ধান পাইনি। এ বছরও আমার দুই মণ বীজ ধান নষ্ট হয়েছে। এখন ধান কেনার মতো পয়সাও নাই।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের মতো গরীব কৃষকের সমস্যার সমাধান করবে কে?’

অভিযুক্ত খাল দখলকারি মো. আক্কাস হোসেন মোল্লা বলেন, ‘জনস্বার্থে যেটা করা লাগবে সেটা আমরা করবো।

অভিযুক্ত অপর খাল দখলকারি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আনসার মোল্লা কৃষকদের সামনে বলেন, গত বছরও পানি নামেনি। এবারও পানি নামবে না।

এ বিষয়ে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদার জানান, জনগণের স্বার্থে আমি বাঁধ কাটার পক্ষে। মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। এ খাল অপসারণ করা হবে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘ওই বাঁধটি খুলে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেছি। দ্রুত কৃষকদের এ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।’

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘আমার ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের একটি আবেদন পেয়েছি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এসএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :