ঝালকাঠিতে বসেছে ভাসমান লেবুর হাট

রেজাউল করিম, ঝালকাঠি
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২১, ১২:৫০

ঝালকাঠির শহর থেকে কৃত্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক দিয়ে যেতে হয় ভীমরুলীর ভাসমান লেবুর হাটে। ঐতিহাসিক ভীমরুলী বাজারে গিয়ে সেতুর উপরে দাড়ালে দেখা যায় শত শত ছোট ডিঙি নৌকায় বসছে লেবুর হাট। পার্শ্ববর্তী ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হচ্ছে এই হাটে।

চাষিরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় নিয়ে আসছে ভীমরুলী খালের ভাসমান এই হাটে বিক্রি করতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা লেবু কিনতে আসছেন এখানে। আসছেন দেশী-বিদেশী পর্যটকও।

তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে পাইকার ও পর্যটকের সংখ্যা এখন কম। এখানে বসে পেয়ারার হাটও। আর কদিন বাদেই পেয়ারাও আসবে এই হাটে। সদর উপজেলার ভীমরূলী ও পার্শ্ববর্তী স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার খালটি মূলত পেয়ারার ভাসমান হাটের জন্যই বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত মণ পেয়ারা বিক্রি হয় এই হাটে। আর কদিন পরই দেখা যাবে সে দৃশ্য। পেয়ারার মৌসুমে পর্যটকের ভীর সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।

এছাড়াও আগস্ট মাসের শেষের দিকে একই নৌকায় করে আমড়া চাষিরা ভাসমান হাটে পসরা বসাবেন।

সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা গেছে, লেবু চাষিরা ভমিরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু পাইকারও দেখা গেল খাল পাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দরদাম করছেন। লেবু চাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পোন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পোন হয়। ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা এই হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবু এখানে বেশ জনপ্রিয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় এক হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরাও লেবু চাষে সাচ্ছন্দবোধ করেন।

লেবু চাষিরা জানান, এক পোন লেবু তারা ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে লকডাউনের কারণে জেলার বাইরে তাদের পণ্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় এখন দামও একটু কমে গেছে।

লেবু চাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছেন। তার উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বছরে তিনি বিক্রি করেছেন চার লাখ টাকার লেবু।

তবে ভাসমান হাটে আসা কয়েকজন লেবুচাষি জানালেন সার সংকট, সরকারি ঋণ ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ার কথা। তারা জানান, সারের অভাবে অনেক সময় তাদের লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যায়। এ কারণে ফলনও কিছুটা ব্যহত হয়। এ ব্যাপারে তারা কৃষি বিভাগের সহায়তা চেয়েছেন। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগও।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক বলেন, লেবু মানুষের শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে লেবু চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :