​নির্মলেন্দু গুণের চাদর এবং আমাদের বিদ্যুত

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২১, ১৫:৫৪

সালেহ উদ্দিন

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ঢাকায় শীত থাকে না। কখনো দুপুরে গরমই অনুভূত হয়। কিন্তু  সে সময়টা সিলেট  অঞ্চল ব্যতিক্রম। বিশেষ করে চা বাগান ও পাহাড়ি এলাকায়  হাড় কাঁপানো না হলেও চাদর-জাম্পার-জ্যাকেট ইত্যাদি গায়ে দেয়ার শীত থাকে।

১৯৯৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের উৎসবে এসেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। গুণদা তার  স্বভাবজাত পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন চুনারুঘাটে। ঢাকায় শীতের কোনো আলামত না থাকায় সঙ্গে গরম কাপড় আনার কোনো প্রয়োজনবোধ করেননি।

উৎসব মঞ্চে উঠেই তিনি শীতে কাপছেন। এক পর্যায়ে বলে উঠেন, ‘আমাকে আগে দিয়ে দাও, খুব ঠান্ডা লাগছে আমি আর বসতে পারব না‘। গুণদার পেছনে বসা ছিল বিদ্যুত। সে বলল, তা কি করে হয়- প্রধান অতিথি আগে কথা বললে অনুষ্ঠান কি আর চলে? আর দর্শক বসে আছে আলোচনার পর আপনার কবিতাপাঠ শুনবে। আপনি বসুন গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করছি বলেই দৌড় দিল বিদ্যুত।

বাসায় গিয়ে আলমারিতে রাখা তার স্বর্গীয় পিতার চাদরখানা নিয়ে এসে গুণদার গায়ে জড়িয়ে দিল। ভাঁজে ভাঁজে ন্যাপথলিন দেওয়া চাদর গায়ে দিয়ে খুশিমনে গুণদা বলেন, রাত ১২টার আগে আমি কিন্তু মঞ্চ থেকে নামছি না।

অনুষ্ঠান চলছে। বিদ্যুতের আবৃত্তির পালা। কিন্তু সে নেই। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনো বাংলাদেশে সেভাবে মোবাইল ফোন আসেনি। কোনো উপায় না দেখে মাইকে ঘোষণা দেয়া হলো; কিন্তু বিদ্যুত নেই।

দুই ঘন্টারও কিছু বেশি সময় পর নতুন কাপড়ের প্যাকেট হাতে অনুষ্ঠানস্থলে বিদ্যুত  হাজির। আমাদের চুনারুঘাটে চাদর বিক্রির ভালো দোকান তখনো হয়ে উঠেনি। বিদ্যুত চলে গিয়েছিল ২৫ কিলোমিটার দূরে জেলা শহর হবিগঞ্জে। গুণদাকে একটা নতুন পাঞ্জাবি  দিবে বলে। গুণদা নতুন পাঞ্জাবি নেননি। তিনি বিদ্যুতকে বলেন, আমি তোমার বাবার স্মৃতি নিয়ে গেলাম।

 

লেখক: সম্পাদক, আইন আদালত সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন, অ্যাফেয়ার্স, ইত্তেফাক