‘আমারে আপনি মাইরা ফেলেন ভাই’

বানসুরি মোহাম্মদ ইউসুফ
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৮:৪৭

রাতে এক ছোটভাই ফোন দিয়ে হাউমাউ শুরু করল। প্রবাসী কর্মী সে, কয় মাস আগে ছুটিতে দেশে এসেছে। ভাবলাম, নিশ্চয়ই তার কোনো আপনজন করোনায় মারা গেছে! সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বললাম, আল্লাহ যাই করেন, ভালোর জন্যই করেন। নামাজ পইড়া বিদেহী আত্মার মাগফেরাত করা ছাড়া আমাদের আর কিইবা করার আছে?

ছোটভাই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কইলো, মিয়াভাই, করোনায় মরলেতো ভালোই হইতো, মরে বেঁচে যেতাম। কিন্তু আমারে মাইরা ফেলতেছে আমার দেশ। ছুটিতে আসছিলাম, এখন পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম বলে আমারে টিকেট দিচ্ছে না ফেরত যেতে। এই সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসও পাসপোর্ট রিনিউ করে দিতে পারবে না, ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ। প্রবাস না ফিরতে পারলে বালবাচ্চারে কী খাওয়ামু ভাই। তারচে আমারে আপনি মাইরা ফেলেন ভাই। করোনা দিয়া মারেন, গুলি করে মারেন, মাইরা ফেলেন।

আমি কইলাম,

- তুমি আমারে কইতেছো ক্যান গুলি করতে? আমি কী করলাম?

- আপনি চাইলে পারবেন ভাই, যেইভাবে হোক আমার প্রবাস ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ভাই। আপনি না প্রবাসীদের মিয়াভাই?

আমি ফার্দার কোনো শব্দ না করে দ্রুত ফোন কেটে দিলাম, গলার স্বর শুনে সে না আবার বুঝে ফেলে, আমিও তার মতো রক্তমাংসের মানুষ, ফেরেস্তা নই।

ল্যাপটপ খুলে অনলাইন ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম, এ কেমন সিদ্ধান্ত! কতটুকু সত্য!

অথচ আমি যা জানতাম, কাজের ভিসায় কেবল প্রথমবার যাওয়ার সময় পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হয়। পরবর্তী সময়ে ছুটিতে এলে পাসপোর্টের মেয়াদ একদিন থাকলেও সে প্রবাস ফেরত যেতে পারবে। কারণ তার পাসপোর্ট রিনিউ'র জন্য প্রবাসে আমাদের দূতাবাস রয়েছে। পাসপোর্ট জমার রিসিট দিয়েও সে ইন্টেরিম এরেঞ্জমেন্টে প্রবাসে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে।

যদি এই ধরনের নিয়ম করে থাকে যে, ছুটিতে এলেও ফেরত যেতে পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাস থাকতে হবে, তবে বর্তমানে দেশে অবস্থানরত লক্ষাধিক প্রবাসী চাকরি হারাবে, ভিসা খোয়াবে! আমাদের পাসপোর্ট অফিসের পক্ষেও এত বড় লোড নেয়া সম্ভব না, সক্ষমতা নেই।

তাইলে কী দাঁড়ালো, আমরা তাদের সাপোর্ট দিতে পারছি না, আবার যেতেও দিচ্ছি না। এ নিয়ম হতেই পারে না। ছোটভাই নিশ্চয় ভুল শুনেছে বা ভুল বুঝেছে! ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালেয় একটা প্রেজ রিলিজ আবিষ্কার করলাম। কেবিনেট ডিভিশনের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম থাকলে বিমানের টিকেট যাতে ইস্যু না করা হয়।

কেবিনেট ডিভিশনের এই নির্দেশনা শুনে আমি খুশিতে লাফায়ে উঠলাম। কোনো ভুল নাই এই সিদ্ধান্তে। কারণ এখানে ‘বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মী’ বলতে সন্দেহাতীতভাবে প্রথমবারের মতো যেসব কর্মী বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কেবল তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। এই নিয়ম আগেও ছিল।

কিন্তু আমার খুশিতে পানি ঢেলে দিলো ঐ প্রেস রিলিজের পরের লাইনে প্রবাসী কল্যাণের নিজস্ব বক্তব্য, ‘তাই যে সকল বাংলাদেশি কর্মীর পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম....তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট রিনিউ করার আহ্বান’।

এতে করে কেবিনেট ডিভিশনের ‘বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মী’ হয়ে গেল ছুটিতে দেশে থাকা কর্মীসহ ‘সকল বাংলাদেশী কর্মী।’ লিংকিং ওয়ার্ড ‘তাই’ আরও ষোলকলা পূর্ণ করে দিলো।

ব্যস, টিকেট বিক্রি বন্ধ। শুরু হয়ে গেল হাউমাউ! ভুল বোঝার কারণেই হোক, আর না হোক, এই বিষয়টা এখনতো একটা ফ্যাক্ট এবং কঠিন সমস্যা! সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে হোক, কিংবা তিনদিনে পাসপোর্ট রিনিউ'র ব্যবস্থা করে হোক (!), এর তো একটা আশু সমাধা দেয়া প্রয়োজন।

না হয় আজ আমার এই প্রবাসী ভাই তার বালবাচ্চার রিজিকের জন্য কাঁদছে, কাল আমরা আমাদের বালবাচ্চার রিজিকের জন্য কাঁদব। ঘুরায়ে ফিরায়ে টাকা আসার বড় সোর্সতো একটাই, তাই না?

লেখক:পরিচালক, দুদক

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এসকেএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :