গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে কেন?

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২১, ১৫:৩১

ডা. নুসরাত সুলতানা

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা একজন সাংবাদিক ও একজন চিকিৎসককে হারিয়েছি, যারা গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও পরিচিত অনেক গর্ভবতী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং অনেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

এখন দেখা যাক, গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে কেন?

প্রথমত, আমাদের দেহে কোনো জীবাণু প্রবেশ করলে  রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো আক্রমণাত্মক হয়ে সেই জীবাণুকে শরীর থেকে অপসারণ করার চেষ্টা করে। গর্ভবতী নারীর গর্ভস্থ শিশুটিও মায়ের থেকে জিনগতভাবে আলাদা। ফলে গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো যদি একইভাবে সক্রিয় থাকতো, ভ্রূণটিকেও অপসারণ করার চেষ্টা করতো। এজন্য প্রকৃতিগতভাবেই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলশ্রুতিতে গর্ভাবস্থায় যেকোনো ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে বাড়ন্ত গর্ভস্থ শিশুর চাপে বুকের খাঁচার জায়গা কমে যায়। ফলে ফুসফুস যথার্থভাবে সংকুচিত, প্রসারিত হতে পারে না। লক্ষ্য করলে দেখবেন, একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভের শেষ তিন মাসে একটু আধটু শ্বাসকষ্ট থাকে। কোভিডের মতো শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন ফুসফুসের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে পরিস্থিতি মারাত্মক করে তুলতে পারে।

যে দুজনের কথা শুরুতেই বলেছি, তারা কিন্তু গর্ভের শেষ তিন মাসের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গর্ভবতী নারীদের ওপর কোভিড সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে করা ১৯২টি স্টাডির (৬৪০০০ গর্ভবতী নারী) একটি সিস্টেমিক রিভিউ করে দেখেছেন, উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন গর্ভবতী নারী যারা স্থুলকায়, যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ছিল এবং অশ্বেতাঙ্গ, তারাই মারাত্মক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন।

তাই গর্ভবতী নারীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভিড়যুক্ত স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভের ৭ মাসে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনেকেই অনেক ধুমধাম করে করেন। এসময়ে এটি এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সর্বোপরি গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার বিষয়ে  সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন এবং গর্ভবতী চিকিৎসকদের হাসপাতালের ডিউটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া অতীব জরুরি।

 

ডা. নুসরাত সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজী বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল  কলেজ

 

ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এসকেএস