এক বছর চার মাস এক অদ্ভুত চক্রে আটকে আছি

শাহজাদ হোসেন মাসুম
 | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৭:০৪

গতকাল যখন আমি হাসপাতালে ঢুকি তখন প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছিল। আজ এক বছর চার মাস এক অদ্ভুত চক্রে আটকে আছি আমরা। একসময় মানুষ এই রোগকে প্রচণ্ড ভয় পেতো। কুর্মিটোলা হাসপাতালের ধারেকাছে মানুষ আসতো না। এই হাসপাতালের গেটের ভিতর কোনো ফুড ডেলিভারিম্যান ঢুকতো না। আজকে গা চুলকানোর রোগী ইমারজেন্সিতে কোভিড রোগীদের ভিড় ঠেলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে, এত বড় হাসপাতাল সরকার আর কয়দিন এমনে ফালাইয়া রাখব!

কোভিডের ইজ্জতের পুরা ফালুদা হয়ে গেছে এই দেশে। কোভিডকে বেইল দেয়ার টাইম নাই মানুষের। একটু মৃত্যুহার আর ইনফেকশন রেইট বেড়েছে, ব্যাপার না। আমাদের মানুষের কমতি নাই। কোভিডে আসলে মানুষ তেমন মরে না। আগামীকাল থেকে সব খোলা, গরুর হাটে গরুরা আসছে, শপিং লিস্ট রেডি, মার্কেট খুলে যাচ্ছে, এলো খুশির ঈদ।

চিপা দিয়া এই দেশের ডাক্তাররা হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় ক্লাউন। আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমরা আসলে ঠিক কি কাজ করছি! এই যে আমার ইউনিটের কার্ডিওলজিস্ট (নাজমুল হুদা), ইকো প্রোব নাই জন্য আলট্রাসনো প্রোব দিয়ে গুতায়ে গুতায়ে বোঝার চেষ্টা করছে রোগীর এনজাইম, ইসিজি ভালো, এক্স-রে তেমন খারাপ না, তবু রোগীর বুক ব্যথা কমে না, ডিসট্রেস কমে না কেন, সে আসলে কেন এইটা করছে! ইকো প্রোব কেনা যায়নি, পরে হয়তো খবর ছাপবে আমরা দশ লাখ টাকা দিয়ে তারওয়ালা ডান্ডা কিনসি, আমার কাজ নাই। যা নাই তা বাদই থাক।

ঈদ করব না? ঈদ? না ভাই, আমাদের এবার চতুর্থ ঈদ যা আসলে নাই। আমাদের সম্মানের কাজ নাই, জাস্ট আমাদের দেখলে হাসবেন না। যখন এনেসথেসিয়াতে কাজ করতাম তখন লোকজন এর চেয়ে বেশি বেইল দিতো। আসলে বেইলটা ব্যাপার না, গোটা দেশ নরমাল হয়ে গেল, আমরা সেই চক্রেই পড়ে থাকলাম, আমাদের জীবনটা স্বাভাবিক হলো না, এটাই একটা দুঃখ। গতকাল আমাদের ইউনিটে একজন রোগী ভর্তি হয়েছে, আঠারো বছর বয়স।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :