কত ঈদ কেটে গেছে জেলে

আব্দুল্লাহ আল হাদী
 | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০২১, ১৪:৫৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কত ঈদ কেটে গেছে জেলে, শুধু একটা জনপদের মানুষের মুক্তির জন্য। ১৫ মে, ১৯৬২ ঈদুল আযহা, এ বছর পরপর দুটি ঈদ-ই সময়ের অনেক বৈরিতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবের জেলখানায় কাটল। তবে ঈদুল ফিতর থেকে আযহা পর্যন্ত, সময়ের এ বৈরিতার যেন আরও বেড়ে উঠেছিল। কেননা ফেব্রুয়ারিতে তিনি জেলে আসার পর থেকে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর ব্যক্তি জীবনকে কেন্দ্র করে।

যেমন তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার সময়েই তাঁর মায়ের গুরুতর অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। মার্চে তাঁর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। টাকার সংকটের কারণে জেলখানা থেকেই ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে আসেন বঙ্গমাতা নিজে গিয়ে। বঙ্গবন্ধু মুজিবের নিজের জেলখানায় হাত খরচের জন্য বাড়িতে টাকা চেয়ে পাঠানোর আবেদন, এর মধ্যে শীত শেষ হওয়ায় বঙ্গবন্ধু মুজিবের জন্য জেলখানায় গ্রীষ্মকালীন কাপড় পাঠানো, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের উপর একের পর এক চাপ বাড়তে থাকে নানাভাবে।

ঈদুল ফিতরের আগের দিন, মার্চের ৯ তারিখ, ডিআইজি আইবি ইস্ট পাকিস্তান বরাবর বঙ্গবন্ধু মুজিব নিজে দরখাস্ত দেন ঈদের দিন পরিবারের সাথে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করানোর জন্য। সেই দরখাস্তে পরিবারের সদস্য যাদের নাম তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তাঁরা হলেন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, সন্তান- হাসিনা, কামাল, জামাল, রেহেনা এবং কাজিন- মি. মমিনুল হক। অপরদিকে ১০ মার্চ বঙ্গমাতা নিজেও একটা এপ্লিকেশন দাখিল করেন ডিআইজি আইবি বরাবর। এবং জেল গেটে বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন।

এরপর মে মাসে আসে ঈদুল আযহা। তার আগে মার্চে কন্যা শেখ হাসিনা জ্বরে আক্রান্ত হওয়া, জেলের ভেতর বঙ্গবন্ধু মুজিব নিজেও চোখের গুরুতর সম্যসায় ভুগছিলেন। তাঁর দাঁতেও প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দিয়েছিল। অন্যান্য অনেক সমস্যা তো ছিলই।

১২ মে তারিখে বেগম শেখ মুজিবের নামে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয়েছে, দরখাস্তে ফোন নম্বর দেয়া আছে ২৫৬১, ঠিকানা - ধানমন্ডি। এবং ১৫ মে ঈদুল আযহার দিন বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে থাকবেন শেখ আবু নাসের, সিস্টার ইন ল'- মিসেস রিজিয়া, কন্যা- হাসিনা, পুত্র- কামাল।

এভাবে সে বছরের পরপর দু'টি ঈদ-ই তাঁর কেটে গেল জেলখানায়, যদিও এ বছর জুন মাসেই তিনি মুক্তি লাভ করেছিলেন তবুও এবারে তাঁর পারিবারের উপর অনেক দৈবাচার নানাভাবে জেঁকে বসেছিল। ফেব্রুয়ারিতে একদিকে বঙ্গবন্ধু মুজিবের পিতা শেখ লুৎফুর রহমান সকালে ঢাকায় এসেছেন বঙ্গবন্ধু মুজিবের মায়ের অসুস্থতার খবর নিয়ে। অথচ এসে দেখলেন তাঁর ছেলেকে আগেই গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে গেছে।

এ বছর বঙ্গবন্ধু মুজিবের বিরুদ্ধে যে চার্জ করা গঠন করা হয়েছিল তার মধ্যে একটা অংশ ছিল এরকম-

আপনি, শেখ মুজিবুর রহমান, পিতার নাম----, ঠিকানা--- বর্তমানে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে আটক রয়েছেন, অর্ডার নম্বর ২৬৯-এইচ.এস তারিখ ২৭.০২.৬২ ক্লজ (এ) সাবসেকশন (১) সেকশন (১৭) অর্ডিন্যান্স মর্মে আপনার ডিটেনশন নিম্নোক্ত কারণে প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে, যে আপনি ঢাকা, ফরিদপুর, চিটাগং, পাবনা, এবং বাকেরগঞ্জে সরকার অপসারণের জন্য গোপন অবৈধ কার্যকলাপে ধ্বংসাত্মকভাবে যুক্ত রয়েছেন। এবং আফটার পার্টিশন ১৯৪৭ এর পর থেকে আপনি ১৯৪৮, ১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৮ এবং আপনার গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত যত সময় না আপনি জেলে ছিলেন সেই সময় টুকু বাদ দিয়ে বাদবাকি সময় আপনি রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব, অক্ষুণ্ণতা ও শান্তির বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন, যা জনস্বার্থ বিরোধী'। ইত্যাদি ইত্যাদি।

[Secret Document Of Intelligence Branch on Father Of The Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, vol-7.

বঙ্গবন্ধু মুজিবের ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ সময় পর্যন্ত অর্থাৎ পুনরায় ফ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সামরিক আইনের মধ্যে থেকেও কৌশলে আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নামে বিলুপ্ত আওয়ামীলীগকে পুনরায় সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি সে সময়ে তাঁর অভ্যন্তরীণ দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্বে আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির লাভ সহ প্রসারও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৬২ তে বঙ্গবন্ধু মুজিব অন্য সময়ের তুলনায় অল্পদিন জেল খাটলেও এবারের গ্রেফতারটা তাঁর পরিবারের সব কিছুকে একটু বেশিই ঝাঁকুনি দিয়েছিল।

লেখক: কবি ও গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :