‘ঈদ-আনন্দ নাই হামার, থাকার চিন্তায় বাঁচি না’

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২১, ১৬:৫৮

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

করোনায় কর্মহীন আর নদ-নদীর ভাঙনে সহায় সম্পদ হারিয়ে ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে কুড়িগ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ। দরিদ্র আর নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদ আনন্দ ভাগ করতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান প্রশাসনের।

সারাদেশের মানুষ করোনার মহামারিতে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করলেও দেশের দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলায় নেই ঈদ আনন্দ। এই জেলায় রয়েছে ১৬টি নদ-নদীর প্রায় পাঁচ শতাধিক চরাঞ্চল। স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকায় জেলায় করোনার প্রভাব পড়েছে অনেক বেশি। টানা লকডাউন আর নদ-নদীর ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এখানকার মানুষদের।

পরিবার নিয়ে সবাই ঈদ উদযাপনের ভাবনায় যখন বিভোর তখন জেলার নিম্ন আয় আর ভাঙন কবলিতরা থাকা-খাওয়ার চিন্তা নিয়েই দিন কাটাছেন। ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় ও মাংস কেনা তো দূরের কথা, একমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে। এমনও আছে যারা ভাত রান্না করলেও নেই তরকারির ব্যবস্থা।

করোনা দুর্যোগ আর নদ-নদীর ভাঙনে দুমুঠো খেয়ে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে তাদের। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ, দেশের অন্য প্রান্তে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে জেলার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে।  আয়-রোজগার কমে গেলেও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, করোনার দুর্যোগ আর নদী ভাঙন, সব মিলিয়ে এবার ঈদ নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই তাদের।

উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গড়াই পিয়ার গ্রামের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ঈদ নাই হামার, আনন্দ নাই হামার। বেটার ঘরে হাতত টাকা-পয়সা নাই। তিস্তা নদীর ভাঙনে বাড়িটাড়ি সোগ বিলিন হয়া গেছে। এলা এই গড়াই পিয়ার মাদ্রাসা ঘরে আশ্রয় নিয়া আছি। এটাও ভাঙ্গি গেলে থাকার কোনটে জায়গা নাই।’  

একই এলাকার ছামিরন বেগম বলেন, ‘বাপুরে হামার নদী ভাঙছে। হামার থাকার কোনটে স্থান নাই। এই মাদ্রাসা মাঠত স্থান নিছি। এখন যে হামার মাদ্রাসা ভাঙনে কডে যামো হামার কোনো বুদ্ধি নাই। ঈদ তো হামরা করবারে পাবান নই। হামার বেটা নাই তিনটা বেটি সেগুলো বিয়া দিছি। নদী ভাঙছে, হাতত ট্যাহা-কড়ি কিছুই নাই। ঈদ করবার পাবারও নই।’

একই এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, ‘এই যে লকডাউনে কাজকর্ম করতে পারি নাই। হাতে টাকা পয়সাও নাই। কিভাবে ঈদ করব কি করব না এর কোনো বুদ্ধি নাই।’  

মজিবর রহমান বলেন, ‘হ্যা বাহে কিসের ঈদ কিসের কি, হামার থাকার জায়গা নাই, তারে চিন্তায় বাঁচি না। আর ঈদের চিন্তা কি করি। লকডাউন আর নদী ভাঙন- এই দুটোই হামাক শ্যাষ করি দিছে।’

জয়নাল মিয়া বলেন, ‘করোনার কারণে হাতে কাজ বেকার দিন কাটছে। নদী এলাকার মানুষ ভাঙনের চিন্তায় আছি। হাতে টাকা-পয়সা নেই। এর উপর দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি। ঈদ কিভাবে করব তা আল্লাহ জানে।’

উপজেলার হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন স্বীকার করলেন, ‘এবার নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদ আনন্দ নেই। মানুষজনের এবার কষ্টটা অনেক বেশি।’  

চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভিজিএফ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধ ভাতা, চল্লিশ দিনের কর্মসূচির টাকা এবং করোনাকালীন অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন যেসব বরাদ্দ আসে তা নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে দেয়া হয়। কিন্তু করোনার মহামারিতে এই সুবিধাভোগীরা বাদেও অনেকেই আছেন যারা দিন এনে দিন খায়। তাই বর্তমান করোনাকালে যে বরাদ্দ আসে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মানুষের হাতে অর্থ সংকট থাকায় পরিবার নিয়ে অন্যান্য বছরের মতো এবারের ঈদ আনন্দ সুখকর হবে না।’

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/এসএ/কেএম)