ঘরভাড়া-দুমুঠো ভাতের চিন্তায় ঘুম নেই বৃদ্ধা আমেনার

হান্নান খাদেম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২১, ১৮:১৪

দুটি হাত ও একটি পা ভাঙা। ক্রাচে ভর দিয়ে কোনো রকমে হাটেন। চোখে ছানি পড়েছে তাই ভালো করে দেখেনও না। স্বামী সন্তান ও আপনজন বলে কেউ নেই। স্টেশনে ভিক্ষাবৃত্তি করে দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটে যেত। কিন্তু দেশে করোনার আসার পর থেকে তাও সম্ভব হচ্ছে না।

এমন অবস্থায় ঘরভাড়া আর দুমুঠো ভাত কিভাবে জোগার করবেন তা ভেবে চোখে ঘুম নেই সত্তোর্ধ বৃদ্ধা আমেনা বেগম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকার ঝর্ণা বেগমের দু’চালা টিনের ঘরের একটি ছোট্ট ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দক্ষিণ চান্দলা গ্রামে।

আমেনা বেগম বলেন, প্রায় চার বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি হাত ও পায়ের হাটু ভেঙে যায়। দীর্ঘ একমাস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসি। ছোট ভাই জহির মিয়া জমিজমা বিক্রি করে বোনের চিকিৎসা করেন। তারপর আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ছোট ভাইয়ের সংসারে থাকি। ভাই নিজের সংসার চালিয়ে আমার চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। ভাইয়েরও আয় রোজগার বেশি ছিল না। তার কষ্ট হতো। এজন্য ভাইয়ের বউ প্রায়ই ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করত। একদিন ভাইকে বললাম আমাকে কোন একটি মাজারে বা রেলষ্টেশনে দিয়ে আয়। আল্লাহ যদি হায়াত রাখে তাহলে বাঁচব।

তারপর প্রায় চার বছর আগে ভাই আমাকে আখাউড়া রেলস্টেশনে রেখে যায়। এরপর থেকে স্টেশনেই এককোণে পড়ে থাকি। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই তা দিয়ে চলি। স্টেশনে থাকতে থাকতে মানুষের দয়া হয়। তারা আমাকে আখাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। হাসপাতালে প্রায় আট মাস থাকার পর বড় স্যার বলে হাসপাতালে আর থাকতে পারব না। তারপর হাসপাতালের এক মহিলার মাধ্যমে শান্তিনগরের এই বাড়িতে একটি রুম ভাড়া নিই। ভিক্ষা করে যা কিছু পেতাম তা দিয়েই ঘরভাড়া আর দুমুঠো ভাত জোগার হয়ে যেত। প্রায় তিন বছর ধরে এই ঘরে আছি। ভাঙা হাত-পা নিয়েও জীবন চলছিল কোন রকমে। কিন্তু এখন করোনা সবকিছু উলট-পালট করে দিয়েছে। চোখেও ছানি পড়েছে, ভালো করে দেখি না, ডায়াবেটিস আছে। দিন দিন শরীরও দুর্বল হয়ে গেছে। ক্রাচে ভর করে হাটাও কষ্টকর। তাই এখন ভিক্ষা করতে কষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, একবছর ধরে রোজগার কমে যাওয়ায় ঘর ভাড়া দিতে পারছিলাম না। গত ৮ মাস আগে বড় বাজার এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে ফেরেশতার মতো একজন মানুষ, আমাকে দেখে তার মায়া হয়। তারপর থেকে তিনি ঘর ভাড়ার টাকা দিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে চাল, ডাল ও ওষুধ দিয়ে যান। এখন তার দয়াতেই দুমুঠো ভাত খেতে পারছি।

স্বামী সন্তান আছে কি না এমন প্রশ্নে বলেন, একটি মেয়ে হয়েছিল, যে শিশুকালেই মারা যায়। স্বামীও মারা গেছে অনেক আগে। তারপর থেকে ছোট ভাইয়ের সংসারেই থাকতাম। গত চার বছর ধরে ভাই খোঁজ খবর নিতে আসে না।

সরকারের কাছে কোন চাওয়া আছে কি না জানতে চাইলে জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই নারী বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন আর কোনো চাওয়া পাওয়ার চিন্তা করি না। হুনছি সরকার গরিবরারে ঘর দিতাছে। আমারে যদি একটা ঘর দেয় তাহলে পরের বাড়িতে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকতে হতো না। বাকি জীবনটা কোন রকমে কাটিয়ে শান্তিতে মরতে পারতাম।

আমেনা বেগমকে দেখভাল করা আখাউড়ার লেখক আলী আহমেদ বলেন, কয়েকমাস আগে একটি ওষুধের দোকানে মহিলাকে দেখে তার কষ্টের কথা জানতে পারি। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে পারছিলেন না। তারপর আমি কিছু ওষুধ কিনে দেই। এরপর থেকে আমি তাকে আমার সাধ্যমত সহযোগিতা করছি। সরকার থেকে যদি তাকে থাকার একটি আশ্রয় করে দেয় তাহলে ভালো হতো।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :