করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২১, ২২:৩৩ | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২১, ২২:২৫
সারাদেশে আইসিইউর জন্য হাহাকার। ছবিটি শনিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে তোলা

মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার কুয়াতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাটুল বিশ্বাস৷ বয়স ৫৫৷ ঈদের আগের দিন ২০ জুলাই নিজ বাড়িতে মারা গেছেন তিনি৷ মৃত্যুর আগে শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশিসহ করোনার নানা ধরনের উপসর্গ থাকলেও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি৷ গ্রামের লোকেরা বলছেন, ‘বর্ষাকালে জ্বর, কাশি সবারই হয়৷ এটা তেমন কিছু নয়৷’

শুধু বাটুল বিশ্বাসই নন, গ্রামাঞ্চলে করোনার উপসর্গ নিয়ে এমন অনেকেই মারা যাচ্ছেন৷ আর গত কয়েক সপ্তাহে গ্রামাঞ্চলে এমন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷

তবে করোনায় মৃত্যু তালিকায় তাদের নাম আসছে না৷ শুধু যারা হাসপাতালে করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন, সেই সংখ্যাটিই করোনায় নিহত বলে লিপিবদ্ধ হচ্ছে৷

মাগুরা জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ‘গত ২৩ দিনে মাগুরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২০ জনের মতো৷ আর আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ জন৷ যেটা অন্য যেকোন জেলার তুলনায় কম৷’

গ্রামে যারা এমন উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের নাম তালিকায় আসছে কি না জানতে চাইলে ডা. দেওয়ান বলেন, ‘না, যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের নামই তালিকায় উঠছে৷ সর্বশেষ গত তিন-চার সপ্তাহে যারা হাসপাতালে এসেছেন তাদের অধিকাংশেরই অক্সিজেনের লেভেল ৩০-৩৫ এ নেমে এসেছিল৷ ফলে দ্রুত অক্সিজেন দিয়েও তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না৷ এছাড়া সারাদেশে যেখানে টিকা নেওয়ার হার এক শতাংশ, সেখানে মাগুরায় ৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে৷’

চলতি মাসের ২৩ দিনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব মাসের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে৷ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ দিনে দুই লাখ ৫৬ হাজার একশ ৯৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চার হাজার ৩৪৭ জন মারা গেছেন৷সরকারি হিসাবে প্রতিদিন যে মৃত্যুর সংখ্যা বলা হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক৷

এর বাইরেও সারাদেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ আর মৃত্যুর সংখ্যা গ্রামে সবচেয়ে বেশি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনাধীন ‘বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি' সারাদেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের তালিকা করছে৷ চলতি মাসের তালিকা এখনো সম্পন্ন হয়নি বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি৷ ফলে এই মুহূর্তে সঠিক সংখ্যাটি বলা সম্ভব না হলেও উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বলে জানায় তারা৷ এ পর্যন্ত যে তালিকা হয়েছে তাতে গত মাসের তুলনায় এই মাসে উপসর্গ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণে বেশি হতে পারে৷ এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য উপাত্তে সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে দাবি তাদের৷

গ্রামে আক্রান্তদের বেশিরভাগই নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নন৷ তবে শুধু আগ্রহের ঘাটতি আছে তা নয়৷ সব এলাকায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই বলে জানা গেছে৷ যে কারণে অনেকেই ঘরে বসে চিকিৎসা করছেন৷ যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা হয়তো কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে উঠছেন৷ আবার সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘উপসর্গ দেখা দিলেও গ্রামের মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে চান না৷ আমি নিজে ঈদের দিন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখেছি, মানুষের ভয় অনেক কমে গেছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানার আগ্রহ নেই তাদের৷ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে গ্রামের মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ ঈদের আগেই এই কমিটি করা হয়ছে৷ উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া, ঘরে থাকা, আইসোলেশনে রাখা এসব কাজে সহযোগিতা করবে ওই কমিটি৷ দু'এক দিনের মধ্যে আবার এই কমিটিকে কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ দেখেন আমরা তো টেস্টের ব্যবস্থা করেছি৷ এখন মানুষ যদি টেস্ট করাতে না যায় তাহলে আপনি কী করবেন?’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তদন্ত হওয়া উচিত৷ সরকারের আইনেও আছে, প্রতিটি মৃত্যুর কারণ জানতে হবে৷ এই মৃত্যুর কারণগুলো যদি করোনা হয়, তাহলে কিন্তু গ্রামের মানুষ ভয় পাবে৷ যেটা এখন তাদের মধ্যে কাজ করছে না৷ আসলে সবকিছু মিলিয়ে মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই৷ এখনো তো গ্রামের অধিকাংশ মানুষ টিকা নেয়নি৷ তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে৷'

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেছেন, অনেক সময় দেখা যায় রোগীর অবস্থা খুব জটিল হওয়ার পর হাসপাতালে আসছেন৷এরপর চিকিৎসা শুরু হয়৷ পাশাপাশি রোগীর নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়৷ ফলে রিপোর্ট আসার আগেই হয়ত কারও মৃত্যু ঘটে৷ তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটাকে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে৷ –ডয়চে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

পালিয়ে আসা সেনাসহ ২৮৮ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাল বিজিবি

উপজেলা নির্বাচনের প্রচারে এমপি নামলে ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর

‘মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে নেমে পরিবহন চাদাঁবাজরা সরকারের আস্থাভাজন হতে চায়’

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও ক্ষতিপূরণ পাননি, কাঁদলেন শ্রমিকরা

৬ বছরে ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৬৭৪, আহত ৪৭৬৫

হজযাত্রীর ভোগান্তি হলে এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ধর্মমন্ত্রী

নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলেই কাজ বন্ধ: মেয়র তাপস 

সুষ্ঠু ভোট করতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে ইসির বৈঠক রবিবার

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :