ময়মনসিংহে করোনা সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছে, অক্সিজেন বাড়ানোর তাগিদ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১২:৫১ | প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২১, ১২:৩০

ময়মনসিংহে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ১৫ জন। আর ময়মনসিংহ জেলায় নয়জন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে নমুনা পরীক্ষার হার কম থাকায় শনাক্তের হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দেয়া তথ্যে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে লকডাউন বা বিধিনিষেধ অমান্য করার কারণে এবং ঈদের আগে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় জনসাধারণের অবাধ চলাচলের ফলে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেলের করোনা ইউনিট সম্প্রসারণ করে নতুন আরও দুটি ইউনিটকে সংযুক্ত করে সাধারণ বেড ও আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে বৃদ্ধি করা বেডগুলো করোনার রোগীতে পরিপূর্ণ হওয়ায় ফ্লোরেও থাকতে হচ্ছে রোগীদের। খুব দ্রুতই হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

মমেক সূত্রে জানা যায়, নতুন ভবনের পঞ্চম থেকে অষ্টম তলায় করোনা ডেডিকেটেড ইউনিট চালুর সময় ২২০টি সাধারণ বেড ও ১০টি আইসিইউ ছিল। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় তা পাঁচ ধাপে ৪০০ বেডে উন্নীত করা হয়। নতুন ভবনের ছয়টি ফ্লোরই করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর চাপ অনুভব করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পুরাতন ভবনের জরুরিসেবা বিভাগের দোতলায় অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসপাতালটিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোভিড পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য দুটি আইসিইউ ছিল। সেগুলোও এখন করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ শয্যা প্রতিদিন বাড়ানো গেলেও আইসিইউ সেবা পরিচালনা করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাব ও যন্ত্রপাতি না থাকায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে, আইসিইউ সমমানের আরও ২৪টি বেড নতুন বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় রয়েছে। সেখানে রোগীদের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলানোর জন্য ট্রায়াজ সিস্টেম এবং ফ্লু কর্ণারকে আরও বেশি সক্রিয় করা হয়েছে।

করোনা গাইডলাইন অনুযায়ী একজন চিকিৎসক ১৫ দিন একটানা কাজ করার পর তিনি ১৫ দিন সঙ্গনিরোধের আওতায় থাকেন। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে এই নির্দেশনা অনুসরণ করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই চিকিৎসক সংকট বাড়ছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সহযোগিতায় কলেজ ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে এবং হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে ২১ জনের সমন্বয়ে মোট ৪০ জন চিকিৎসক দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সঙ্গনিরোধ মেনে ১৫০ জন সেবিকা কাজ করছেন তিন পালায়। পরিচ্ছন্নকর্মীর রয়েছে তীব্র সঙ্কট, মাত্র ২৫ জন পরীচ্ছন্নকর্মী দিয়ে চলছে ৪২৬ রোগীর পুরো ইউনিট ।

মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ১০ হাজার লিটারের একটি সিলিন্ডারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের ব্যক্তিগতভাবে দেয়া ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ৭০০টি সাধারণ সিলিন্ডার রয়েছে। করোনা ইউনিটে ২৯টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ২০টি ভেন্টিলেটর, ১৩টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর রয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত আছে।

এসব বিষয় নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. মহীউদ্দিন খান বলেন, করোনা ইউনিটে রোগীদের চাপ বাড়ছে। এ কারণে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আইসিইউ সিট বাড়ানোর জন্য যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন, তার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। শিগগির দক্ষ জনবল পাওয়া গেলে আইসিইউর চাহিদা পূরণ করা যাবে।

ময়মনসিংহ মাইক্রবায়েলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা আহমাদ শনিবার রাতে বলেন, ২৩ জুলাই পর্যন্ত গত ১৯-২০ জুলাই নমুনার ফলাফল দেয়া সম্ভব হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার নমুনার ফলাফল অপরীক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো যারা এন্টিজেন টেস্ট করে নেগেটিভ বা পজিটিভ তারা আবার পিসিআর টেস্ট করাচ্ছেন।

এই চিকিৎসক বলেন, এন্টিজেন টেস্টে পজিটিভ মানে পজিটিভ। এন্টিজেন টেস্টে পজিটিভ না হলে যদি উপসর্গ থাকে সেই ব্যক্তি পিসিআর টেস্টে আসতে পারেন। তাই পিসিআর ল্যাবের ওপর চাপ কমাতে তিনি জনগণকে এন্টিজেন টেস্টের দিকে আগ্রহী করে তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। নমুনার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিটি ভ্যালু ২৭ এর নিচে হলে তা আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। তবে ময়মনসিংহে এখনো ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি বলে জানান সালমা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মতিউর রহমান শনিবার রাতে বলেন, অক্সিজেন সংকট মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে হাসপাতালে খুব দ্রুত আরও একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনের কাজ শুরু করা দরকার। করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি অক্সিজেন সাপোর্ট। তাই হাসপাতালে প্রথমেই দরকার হয় অক্সিজেন। হাসপাতালের প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে অনেক জটিল রোগীদের আইসিইউতে নিতে হয় না। অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক থাকলে ভেন্টিলেটর পর্যন্ত যাওয়ারই দরকার হয় না। তাই করোনা হাসপাতালে শুরুতেই অক্সিজেন সাপোর্ট বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :