কামরাঙ্গীরচরে মা-মেয়ে হত্যায় বড় মেয়ের জবানিতে যা জানা গেল

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০২১, ১৮:৪৩ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে মা-মেয়েকে পলিথিন মুড়িয়ে শ^াসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে। নিহত ফুলবাসির বোন বিশখাবাসী বাদী হয়ে ভগ্নিপতি মুকুন্দ্র চন্দ্র দাসকে একমাত্র আসামি করে শনিবার দিবাগত রাতে কামরাঙ্গীরচর থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
মামলাটির তদন্ত করছেন কামরাঙ্গীরচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, মা-মেয়ে হত্যা মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত মুকুন্দ্র চন্দ্র দাসকে পুলিশ হেফাজতে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।


বিশখাবাসী জানান, তার বোন ফুলবাসী রানী দাস এবং তাদের দুই মেয়ে ঝুমা রানী ও সুমি রানীকে নিয়ে বোন জামাই মুকুন্দ্র চন্দ্র প্রায় এক যুগ ধরে কামরাঙ্গীরচরের নয়াগাঁওয়ের আবদুর রহিমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করে আসছিলেন।
এজাহারে বিশখাবাসী বলেছেন, শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে বোনজামাই মুকুন্দ্র মোবাইলে ফোন করে জানান, আমার বোন এবং তার মেয়ে মারা গেছে। আমার স্বামী জগেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং চাচাতো ভাই দীনেশ চন্দ্র দাসকে নিয়ে ঢাকায় আসি। পরে আমার বোনের বড় মেয়ে ঝুমা রানী দাস আমাদের জানায়, শুক্রবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১০টার দিকে আমার বোন ফুলবাসি দাস রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। দুই মেয়ে ঝুমা ও সুমি তাদের বাবা মুকুন্দ্র চন্দ্র দাসের সঙ্গে টিভি দেখে। পরে রাত ১১টার সময় তার বাবা ফ্লোরে এবং তারা দুই বোন মায়ের সঙ্গে খাটে ঘুমিয়ে পড়ে।


বিশখাবাসী এজাহারে বলেছেন, ঝুমা রাত একটা থেকে দেড়টার মধ্যে ঘুম ভেঙে উঠে দেখতে পায়, তার বাবা নিচ থেকে ওঠে তাদের সঙ্গে শোয়া। এসময় ঝুমা মোবাইলের আলো জ¦ালিয়ে দেখে বাবার হাতে একটি পলিথিন। ঝুমা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর আনুমানিক ভোর চারটার সময় সুমির পায়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঝুমার ঘুম আবারও ভেঙে যায়। তখন ঝুমা দেখতে পায় সুমি ছটফট করছে এবং তার বাবা সুমীর মুখে পলিথিন চেপে ধরে রেখেছে। তখন ঝুমা তার বাবাকে পলিথিন চেপে ধরার কারণ জানতে চাইলে বাবা বলেন যে ঘরে ছারপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার কারণে সুমির বমি আসতেছে। বাবা ঝুমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলে।


বিশখাবাসীর অভিযোগ, এর কিছুক্ষণ পর সুমির ছটফটানি বন্ধ হয়ে যায় এবং তার বাবা খাট থেকে নিচে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ঝুমা তখন তার মায়ের গায়ে হাত দিয়ে দেখে শরীর ঠান্ডা, শক্ত হয়ে আছে, কোনো প্রকার নিশ^াসও নিচ্ছে না। তার বোন সুমিরও একই অবস্থা দেখে বাবার মোবাইল দিয়ে পাশের বাসার বেবি মাসিকে ফোন করে এই ঘটনা জানায় ঝুমা।
বিশখাবাসী জানান, খবর পেয়ে বেবিসহ আশপাশের লোকজন ঘরে ঢুকে খাটের ওপরে ফুলবাসি ও সুমির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে তারা কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে ফুলবাসি ও সুমির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। এসময় মুকুন্দ্র চন্দ্রকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জহিরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই মামলার একমাত্র আসামি মুকুন্দ্র চন্দ্র দাস বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা মা-মেয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করবো।
এদিকে নিহত ফুলবাসি ও তার মেয়ে সুমির মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার মিরপুর গ্রামে স্বামী মুকুন্দ্রের গ্রামের বাড়ির শ^শানে দাহ করা হয়। পাশের গ্রাম হরিনগরের মৃত চানমোহন দাসের মেয়ে ফুলবাসী।


(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/এএ/ডিএম)