শিমুলিয়া ঘাট সরালে ঝুঁকিতে পড়তে পারে পদ্মা সেতু

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২১, ১১:৫৩ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১, ১৬:০৩

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা এড়াতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলা বাজার ঘাট স্থানান্তর করলে সেতু ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। 

গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ফেরি শাহ জালালের ধাক্কার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুর কাদের জানান, শিমুলিয়া ঘাট সরিয়ে মাওয়ার পুরাতন ফেরিঘাটে নিয়ে গেলে সেখানকার নদীশাসন কাজ ব্যাহত হবে। এছাড়াও ঘাট স্থানান্তর করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। এই সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এছাড়াও ঘাট সরিয়ে নিতে শত কোটি টাকা খরচ হবে। 

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই বর্ষা মৌসুমের জন্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজ বন্ধ আছে। মৌসুম শেষে সেপ্টেম্বরের দিকে নদী শাসনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর আওতাধীন এলাকায় শিমুলিয়া ঘাট স্থানান্তর করা হলে তখন নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে। বর্ষা মৌসুমের সময় শুকনো মৌসুমে কাজ করার যে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে।
 
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শরফুল ইসলাম সরকার বলেন, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাট এলাকাটি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের। চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোকে নদীশাসনের জন্য এলাকাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করে তারপর পদ্মা সেতুকে বুঝিয়ে দেবে।

২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, বর্তমান শিমুলিয়াঘাট থেকে যদি পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ঘাট স্থানান্তর করা হয়, তবে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে। তাছাড়া ওই অংশে নদীতে ফেরি চলাচলের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বার্জ, ড্রেজারসহ মালামাল বহন করে চলাচল করতে পারবে না।

অন্যদিকে বাংলা বাজার ঘাট মাঝিকান্দিতে সরিয়ে নিলে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হবে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে নদী শাসন কাজের সুবিধার জন্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে বাংলাবাজার স্থানান্তর হয়েছিল।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা মনে করছেন, ঘাট স্থানান্তরের কাজটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এর জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, বালু ভরাটসহ বেশ কিছু কাজ করতে হয়। ঘাট স্থানান্তরের কাজ শেষ করতে করতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

২৩ জুলাই শুক্রবার মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা শাহ জালাল নামের একটি ফেরি পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে সজোরে আঘাত করে। এতে ফেরিতে থাকা বিভিন্ন বাসের অন্তত ২৫ জন যাত্রী আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর পিলার। পিলারের পাইল ক্যাপের উপরিভাগ ও সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই ঘটনার দিন রাত ১০টায় শিবচর থানায় সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের একটি জিডি করেন।

সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা দেয়া ফেরি শাহ জালালের চালককে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়। এরপর শনিবার চালক আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদেরের করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়, এর আগেও একাধিকবার বিআইডব্লিউটিসির ফেরি সেতুর কয়েকটি পিলারে আঘাত করেছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার বিআইডব্লিউটিসির সংশ্লিষ্টদের মৌখিক ও লিখিতভাবে সাবধানতার সাথে ফেরি চালানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে সেতুর নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। তাছাড়া ফেরিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসংখ্য প্রাণহানি ঘটতে পারে।

এই ঘটনার পরে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট মাওয়ায় সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সেতুতে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। অথবা মাদারীপুরের বাংলা বাজার ফেরি ঘাট আট কিলোমিটার দূরে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দিতে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।

ওই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর পিলারের পাইল ক্যাপে রাবার স্থাপনেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই নৌ রুটে দুর্বল ফেরি সরিয়ে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে এমন ফেরি চালানো উচিত বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ। সেতুর মূল আকৃতি দোতলা।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এজেড/কেআর)