প্রতিবন্ধী শব্দটি কোনো বিশেষণ নয়

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২১, ১৯:০৩

রোবেনা রেজা

আমি কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুকে দেখছি, পড়ছি, অনেক ধরনের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু কিছুই লিখছি না। কারণ আমি জানি এটা নিয়ে বলে খুব একটা লাভ হবে না। আমি এর আগেও এই বিষয়ে যতবারই স্ট্যাটাস দিয়েছি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধু এবং আত্মীয়রা রেসপন্স করেনি। আমার বন্ধুরাই, আত্মীয়রাই যখন আমার দুঃখে দুঃখিত না বাকিদের কাছ থেকে কি আশা করতে পারি? এখন যখন ঝড় উঠেছে এই ইস্যু নিয়ে তখন অনেকেই হয়তো আমার কিছু বলা উচিত ভেবে অনেক কথাই বলবেন, তবে তারা নিজেরাও আসলে কতটুকু অন্তরে ধারণ করে কথাগুলো বলছেন সেটাই ভাববার বিষয়।

শুধু এতটুকুই আশা করি প্রতিবন্ধী শিশুর পিতা-মাতা হওয়ার মতো সৌভাগ্য যেন কোনো পাপীর না হয়। তাহলে আর তার পাপের সাজা হলো কোথায়? সে তো একজন নিষ্পাপ মানব ফেরেশতার পিতা-মাতা হয়ে রক্ষাই পেয়ে গেলেন।

যারা কথায় কথায় কোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব বা আচরণকে প্রতিবন্ধী শব্দটি দিয়ে বিশেষায়িত (টিজ) করেন তাদের উদ্দেশে বলছি প্রতিবন্ধী শব্দটি কোনো বিশেষণ নয়। 

অটিজম:

* শিশুর দাদি-নানিরা ভাবেন-অসুখ আছে যখন, তার নিরাময় আছে।

* পুরোনো বন্ধুরা ভাবেন-আশাকরি এসব ছোঁয়াচে নয়।

* অন্য বাচ্চারা ভাবে-অদ্ভুত! এ তো কথাই বলতে চায় না। বললেও সেই একই কথা বারবার বলে যায়।

* ডাক্তারেরা ভাবেন-যাক ও তো শারীরিকভাবে অসুস্থ নয়, বাকি সমস্যা ওর অটিজমের অংশ।

* অনভিজ্ঞ শিক্ষকেরা ভাবেন ওদের স্পেশাল স্কুল দরকার, আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়।

* অপরিচিতরা ভাবেন- বাবা-মায়েরা বাচ্চাটাকে ডিসিপ্লিনটুকুও যদি শেখাতো!

* দোকানদারেরা ভাবেন- এতো কাস্টমারের মাঝে বাচ্চাটার চিৎকার চেঁচামেচি যদি বন্ধ করা যেত!

* আপনার অফিস বস ভাবেন- ওহ, বাচ্চার স্ট্রেস কমানোর জন্য আবার ছুটি নিয়ে বাইরে যেতে হয় নাকি! ওই বয়সের সব বাচ্চাই স্ট্রেসফুল হয়।

* বাচ্চার হেয়ার ড্রেসার ভাবেন- আমার কাছে না যেন আর চুল কাটতে নিয়ে আসে!

* জ্ঞান ও বোধহীন ব্যক্তি বলবেন- বাচ্চাকে কন্ট্রোল করতে পারেন না কেন?

* সরকার ভাবেন- যা চোখে দেখা যায় না সেরকম কোনো ডিস্যাবিলিটির জন্য আমরা কেন খরচ করতে যাব!

* আপনার প্রকৃত বন্ধু/ভালো শিক্ষক/ভালো আত্মীয় বলবেন- আমাদের বুঝতে সাহায্য করুন আমরা কীভাবে ওর সঙ্গে মিশতে, শেখাতে ও ভালোবাসতে পারব।

* বন্ধুরা ৫ মিনিট সময় দিয়ে অটিজমকে ঘিরে মিথ্যা কাহিনিগুলো থেকে মুক্ত হোন। অটিজম বোঝেন এরকম কাউকে জিজ্ঞাসা করুন।

* অটিজমকে বোঝার সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো- অটিজম আছে এরকম ব্যক্তিরা বোঝাতে পারেন না। চেষ্টা করেই আপনাকে জানতে হবে।

আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা প্রায় সাড়ে চারশো বন্ধু এবং আত্মীয়রই এই ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট নেই, তারা জানতেই চায় না অটিজম কি, একজন অটিস্টিক শিশুর পরিবারের অনুভূতি তারা কি বুঝবেন? এমনকি আমার ফ্রেন্ডলিস্টেরই কেউ একজন আমার সামনে এবং ফেসবুকে অটিস্টিক বলে কাউকে টিজ করেছে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে বিশেষায়িত করেছে। সেখানে বাকিদের কাছ থেকে (যাদের পরিবারের বা বন্ধু মহলে কারো অটিজম নেই) কি সচেতনতা বা সহানুভূতি আশা করব?

লেখক: অভিনয়শিল্পী

ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এসকেএস