যাদের অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ০৯:৪০ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ০৯:৪১

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

অ্যালজাইমার মস্তিষ্কের এমন রোগ যা মানুষের বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়। অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্তরা প্রথমে সামান্য বিভ্রান্ত হয় এবং অনেক কিছু ভুলে যেতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তাদের চরিত্রের আমূল পরিবর্তন হয় এবং আপনজনকে চিনতে পারে না। অ্যালজাইমার রোগ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের সবথেকে প্রচলিত কারণ। মস্তিষ্কের নানা রকমের বিকৃতি বা বিকারের লক্ষণ হল স্মৃতিভ্রংশ, যা সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা সৃষ্টি করে এবং বুদ্ধি ও বিচারবিবেচনার ক্ষমতা লোপ পায়। মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা প্রভাবিত হয়।   

 

অ্য়ালজাইমার বা স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা কোনও নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী হয় না। অ্যালজাইমারের অন্যতম লক্ষণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিচিত মানুষদের উপর হামেশাই চিৎকার-চেঁচামেচি করে থাকতে পারেন এই রোগে আক্রান্ত রোগী।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাল বা তারিখ কিছুতেই মনে না পরার এর অন্যতম লক্ষণ। এক্ষেত্রে মারাত্মক হারে মুড স্যুইং দেখা দিতে পারে। কথা জড়িয়ে যাওয়া বা সঠিকভাবে কথা বলতে না পারাও এর লক্ষণ।

 

থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুব তাড়াতাড়ি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। আশেপাশে ঘটে চলা সবকিছুতেই অবাক হয়ে যাওয়া। ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিলে তা চিন্তার বিষয়। পরিচিত মানুষদের থেকে একেবারেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা অ্যালজাইমারের অন্যতম লক্ষণ।

 

রক্তে কোলেস্টেরল ও হোমোসিস্টিনের পরিমাণ বাড়লে অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিনের উৎপাদন বেশি হয়  তখন অ্যালজাইমারসের লক্ষণ প্রকট হয় ।

হাইপার-থাইরয়েডিজম, ওবেসিটি ও হাই ব্লাডপ্রেসারের কারণে অ্যালজাইমারস রোগ হতে পারে।

 

ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস, দীর্ঘকাল ধরে মানসিক অবসাদ , কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ থাকলে অ্যালজাইমারস ও ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ।

 

বংশগতিতে বাবা – মা অথবা ভাই – বোনের মধ্যে অ্যালজাইমারসের ইতিহাস থাকলে রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

 

অতিরিক্ত মদ্যপান, মাথায় চোট – আঘাত সেরিব্রাল স্ট্রোকের রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় ।

 

বহু বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে যারা আর্সেনিক , মার্কারি , সীসা ইত্যাদি ধাতুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন , তাদের স্মৃতিভ্রংশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

 

শরীরে ভিটামিন – বি, ফোলিয়েট , থায়ামিন , নিয়াসিনের অভাবজনিত কারণে ডিমেনশিয়া দেখা দিতে পারে। পিটুইটারি অ্যাডেনোমা, ব্রেন টিউমার , মেনিনজিওমা প্রভৃতি টিউমার মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে । কেমোথেরাপি ও ব্রেন রেডিওথেরাপির পরে অ্যালজাইমারসের সম্ভাবনা বাড়ে ।

 

অ্যান্টি – কোলিনার্জিক ও অ্যান্টি-কনভালস্যান্ট মেডিসিন, অনেক মানসিক রোগের ওষুধ , নিদ্রাহীনতার ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে । ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ।

 

অ্যালজাইমার প্রতিরোধে

 

ফ্যাট জাতীয় খাবারের ব্যবহার যথা সম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, প্রতিদিন ভোরে আধ ঘণ্টা হাঁটা , মানসিকভাবে নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যক্ত রাখা , বন্ধু বান্ধবদের সাথ আচ্ছা আলোচনায় অংশ নেওয়া — এক কথায় কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা এই রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে ।

কাছের মানুষজনের সাহচর্য , উষ্ণ সহৃদয় ব্যবহার ও ভালোবাসা পেলে বৃদ্ধ বয়সে অ্যালজাইমার , মানসিক অবসাদ ইত্যাদি রোগের প্রবণতা কমে । তাদের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটালে , ধৈর্য সরকারে তাদের সুবিধা অসুবিধা বুঝলে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং জীবনকে নতুন করে উপভােগ করার মানে খুঁজে পাবেন ।

 

থাইরয়েড, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ যেহেতু অ্যালজাইমার রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়, এসব রোগ থাকলে তা যথাশীঘ্র চিকিৎসায় সারিয়ে তুলতে হবে।

 

বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ টাটকা শাকসবজি নিত্যকার খাদ্যতালিকায় রাখলে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতার সম্ভাবনা কমে।

 

ব্রেনের এনার্জি ফুড হচ্ছে ফ্যাটি অ্যাসিড। যত ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, তাদের মধ্যে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডই মানব মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় । বিশেষ করে মেমরি মেকানিজম ঠিক রাখার জন্য। মিঠাজলের রুই কাতলা প্রভৃতি পোনা মাছে এবং সার্ডিন, পমফ্রেট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সামদ্রিক নোনা মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা – থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে । যা অ্যালজাইমার ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

 

স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধে অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার-দাবার খুবই উপকারী । কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে মেমরি অ্যাক্টিভিটি চাঙ্গা রাখে । এছাড়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোকে ধবংস করে দেহের নিউরোট্রান্সমিটার সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে । ফুলকপি, টমেটো, পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি, রসুন, বীন, স্ট্রবেরি, আমলকি, খেজুর, কিসমিস প্রভৃতিতে খুবই উন্নতমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় , যা ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

 

মাছ, মাছের তেল, মধু, কমলালেবু, মিষ্টি আলু, গাজর, ব্লু-বেরি , আপেল , সানফ্লাওয়ার সীড ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখলে অ্যালজাইমারস রোগীদের স্মৃতি-সমস্যা কমবে ।

 

অ্যালজাইমার রোগে এক চামচ নারিকেল তেল বেশ কার্যকর। একটি নিউরোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত, নারিকেল তেল বা দুধে মিডিয়াম চেন ট্রাইগ্লিসারাইডস নামে এক প্রকার ফ্যাট পাওয়া গিয়েছে। যা প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যালজাইমার রোগের নিষ্পত্তি ঘটাতে পারবে নিমেষেই।

 

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/আরজেড/এজেড)