উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়ছে দেশি মাছের হুমকি সাকার ফিশ

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ১৩:৫৭

আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ

মাছটির নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। তবে সাকার ফিশ নামে সবাই চেনে। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হর হামেশাই দেখা যাচ্ছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন নদী, হাওর ও জলাশয়ে। এই মাছ জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয়ভাবে উৎপন্ন অনেক প্রজাতির মাছ পড়েছে ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশে প্রাপ্ত সাকার ফিশ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। মাছটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধক এই মাছটি উন্মুক্ত পরিবেশ পেয়ে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। দ্রুত বংশবিস্তার ও প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে। ইতোমধ্যে এই মাছের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশের মৎসখাত। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী এই মাছটি কিভাবে জলাশয়গুলোতে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারছে না কেউ। আর দেশের মৎস খাতকে ধ্বংস করতে এই মাছটি দেশের প্রত্যন্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কোন চক্র জড়িত আছে কি? এমন প্রশ্ন ওঠেছে। জলাশয়ের এই মাছ চাষীদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মাছ।

বিএফআরআই অনুসন্ধানে জানা যায়, গত তিনমাসে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয়ে অসংখ্যবার এই সাকার মাছটি পাওয়া গেছে। এই মাছটি পাওয়া যাচ্ছে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, যশোর সিলেট খুলনাসহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জলাশয়গুলোতে। মাছটির ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মৎস্য গবেষকরা।

সাকার ফিশ জলজ পোকামাকড় ও শেওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাছাড়া সাকার ফিশের পাখনা খুব ধারালো। মাছের সাথে লড়াই করার সময় ধারালো পাখনার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। সাকার ফিশ রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার খায়। এসব কা্রণে বেশিরভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে জলাশয় থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

জিওগ্রাফি অ্যান্ড ইউ ডটকম জানিয়েছে, মিঠাপানির এই মাছটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। বিশেষত ব্রাজিলে অ্যামাজন অববাহিকায় এই মাছ প্রচুর পাওয়া যায়।

এই মাছের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে, এই মাছ প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে জলাশয়ের অন্যান্য মাছ খাদ্য সংকটে পড়ে। সাকার ফিশের উপদ্রবে অনেক মৎস্য খামারি পথে বসেছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে চীন থেকে বিশেষজ্ঞ দলও এনেছিল মিয়ানমার, কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি।

বাংলাদেশে এই মাছের বিস্তার বিষয়ে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো. খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সাকার মাউথ ক্যাটফিশের বিস্তার নিয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি। এই মাছটি দ্রুত বংশবিস্তার করায় জলাশয়ের দেশীয় মাছগুলো এখন হুমকির মুখে পড়ছে। এই মাছটির নিধন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে শীঘ্রই দেশের মৎসখাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে এই বিজ্ঞানীর মত।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/পিএল)