হঠাৎ এশিয়া নিয়ে কেন এত তৎপর যুক্তরাষ্ট্র?

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ১৫:৪৭ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ১৬:১২

মো: সদর উদ্দীন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিতে এশিয়া সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোসহ এই মহাদেশের প্রায় সব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনও না কোনও স্বার্থের সংশ্লেষ আছে। ফলে এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র তৎপরই থাকে। তবে দেশটির তৎপরতা একটু বেশিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন ভারত সফরে এসেছেন। এখান থেকে যাবেন উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে। এর আগে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও চীন সফর করেছেন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান। এদিকে হোয়াইট হাউজে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-কাদিমির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রায় একইসময়ে এশিয়া নিয়ে কেন এত তৎপর যুক্তরাষ্ট্র? এর পেছনে বিশ্লেষকরা অনেকগুলো কারণ থাকার কথা বলছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ‘আফগানিস্তান’। প্রায় দুই দশক ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে তারা সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। যুক্তরাষ্ট্র চলে গেলে উপজাতি-বিরোধ ও ক্ষমতার দখল নিয়ে ‘অশান্তিতে’ থাকা আফগানিস্তানে এই অঞ্চলে প্রভাববিস্তারী দেশ চীনের উপস্থিতি বেড়ে যেতে পারে।

আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিকট ইতিহাসের সবচেয়ে ‘ভালো অবস্থানে’ রয়েছে। দেশ দুটির সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ট হয়েছে যে চীনের জিনজিয়াংয়ে নিপীড়িত উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মিত্র পাকিস্তান।

ইকোনোমিক করিডোর ঘিরে পাকিস্তানে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করেছে চীন। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড পরিকল্পনাকে ঘিরে চীন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য আফগানিস্তানও তাদের জন্য ভালো জায়গা হতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত।

চীন ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক বরাবরই একটা ‘বৈরি বাতাবরনে’ মোড়ানো। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক প্রায় ‘সাপে-নেউলে’ আকারে বিদ্যমান। বিশ্লেষকদের ধারনা, আফগানিস্তানে চীন যেন আধিপত্য বিস্তার না করতে পারে সেজন্য ভারতকে কাছে পাবার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে গেলে দেশটিতে প্রভাব বিস্তার করতে এই অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশগুলো। বিশেষ করে দেশটির একসময়ের ‘ভৌগলিক অধিকর্তা’ রাশিয়া নতুন করে এখানে হাজির হতে পারে।  এরই মধ্যে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া তালেবানদের রাশিয়া সফরের খবরও এসেছে। ফলে আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ বহুমাত্রিকতায় রূপ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, ‘চীনের আগ্রহে আফগানিস্তান একটি বড় ক্ষেত্র। এশিয়ায় চীন যেভাবে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে নজর দিচ্ছে তা থেকে আফগানিস্তানকে তারা বাদ দিতে চাইবে না।’

শুধু আফগানিস্তানই নয়, ইরাক থেকেও যুদ্ধ শেষ করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে তারা ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবেন।

ভারত সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন তার দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ব্লিংকেনের ভারত সফর শেষে কুয়েতে গেলে তার এই অঞ্চল সফরের ভেতরকার প্রকৃত অবস্থা কিছুটা হলেও বোঝা যেতে পারে।

এশিয়া নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা কেন বেড়েছে তা বুঝতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে বইকি। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কারও কারও ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার পেছনে দিনান্তে দিন বেড়ে চলা চীনের প্রভাবের রাশ টেনে ধরাই মূল উদ্দেশ্য।

লেখক: সাংবাদিক