​আমাদের কাজে আমরা খুব নিঃসঙ্গ

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২১, ১৬:৫২

শাহজাদ হোসেন মাসুম

সহজ করে একটা হিসাব আপনাদের জানাতে চাই। গত বছরের এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ষোল মাসে আমাদের আইসিইউতে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৩৯ জন। আমরা স্টেপ ডাউন করতে পেরেছি ২২৭ জনকে। মারা গেছেন ৩৭২ জন। ৩০ জন অভিভাবকের ইচ্ছায় প্রাইভেট আইসিইউতে শিফট হয়েছেন, ১০ জন ইন সিটু আছেন।

 

এই পুরো ষোল মাসে গড় মৃত্যুহার ৫৮ শতাংশ। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও এর চেয়ে কমাতে পারিনি। সরকারি জায়গাগুলোতে হয়তো কেউ কেউ আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে পারেন। তার কিছু ব্যাখ্যা আছে।

 

কাজেই আপনারা আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট এবং হতাশ হতে পারেন। তবে আমরা যখন রোগী পাই তার অবস্থা আসলেই খুব খারাপ থাকে। আমরা হারা যুদ্ধ শুরু করি। আমাদের প্রতিপক্ষ সাধারণ কোভিড নয়, এই কোভিডের চেহারা ভয়ংকর। তার শক্তি এখন পর্যন্ত আমরা মাপতে পারিনি। এই কাজটায় অনেক সাহস লাগে, ডেডিকেশন লাগে। প্রবল প্রতিপক্ষের সাথে নামমাত্র অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নামা, হারতে থাকা এবং তারপরও মনোবল ধরে রেখে সমান সতর্কতায় যুদ্ধটা করে যাওয়া বড় সহজ কাজ নয়। আমরা তো কোনো বীরযোদ্ধা নই, ছাপোষা চিকিৎসক, নার্স।

 

আমাদের কাজে আমরা খুব নিঃসঙ্গ। একটা হাসপাতালে ননকোভিড সময়েই আইসিইউর চিকিৎসক, স্টাফরা নানা কারণে অপ্রিয় থাকেন। এখন তার মাত্রা অনেক বেশি। আমার খুব ক্লান্ত লাগে। যাদের রোগী মারা যান তারা তো আমাদের বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ থাকেন, যাদের রোগী আমরা স্টেপ ডাউন করে ওয়ার্ডে পাঠাতে পারি তারাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর বিরক্ত থাকেন। আর যাদের রোগী আমরা বেড খালি না থাকার কারণে নিতে পারি না তারা মনে করেন আমরা দানব, আমরা টাকার বিনিময়ে রোগী নিই, শুধু সমাজের উঁচুতলার অনুরোধে রোগী নিই। তারা সারাক্ষণ আমাদের অভিশাপ দেন।

 

সত্যটা শুধু আমরা জানি, আমরা কি পারছি না এবং কি পারছি। তবে আমি বিশ্বাস করতে চাই, দেশের কোভিড পরিস্থিতি কিছুদিন পর কিছুটা সহনীয় হবে। কোনো কারণ নেই। এটা আশা। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। এই দেশের মানুষকে তার অনুগ্রহ ছাড়া রক্ষা করা যাবে না। তারা কথা শুনবে না। তাদের কুযুক্তির শেষ নেই। নিয়ম মেনে চলুন। তবুও বলে যাব মাস্ক পরুন, সামাজিক সমাবেশ বন্ধ রাখুন, পরিচিত সবাইকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

 

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এসকেএস